ফ্ল্যাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গুরুত্ব

আসসালামু আলাইকুম, বর্তমান এই আধুনিক সময়ে সবাই চায় তার চারপাশের বিচরণের জায়গাগুলো সাজানো-গোছানো রাখতে। এখনকার প্রত্যেকটা মানুষই শৌখিন। যার জন্য তাদের চারপাশটা সখের জিনিসপত্র দিয়ে বিচিত্র স্টাইলে সাজাতে বেশি পছন্দ করে। 

তবে, আমরা সাজাতে চাইলেও সবসময় সবাই সাজিয়ে উঠতে পারিনা। সেটা হতে পারে সময়ের অভাবে কিংবা সৃজনশীলতার। ফলে অনেকের শখ শখই থেকে যায়। তার  বাড়ি কিংবা অফিসটিকে স্বপের মতো আর সাজানো হয়ে ওঠে না।

আর এই আধুনিক সময়ে এই সমস্যার সমাধানের জন্যই এসেছে ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়র ডিজাইন। হ্যাঁ, ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমে আপনি আপনার শখের বাড়িটিকে স্বপ্নের মতো রুপ দিতে পারেন। এজন্যই আজ আমরা লিখব ফ্ল্যাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গুরুত্ব কতখানি। তো চলুন বন্ধুরা জানা যাক-

ইন্টেরিয়র ডিজাইন 

ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেন করবো এটা বোঝার আগে আমাদের প্রথমেই বুঝতে হবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন আসলে কী। ‘ইন্টেরিয়র’ অর্থ অভ্যন্তরীণ এবং ডিজাইন অর্থ নকশা। ইন্টেরিয়র ডিজাইন টার্মটি মূলত বাড়ির ভিতরকার এবং বাড়ির চারপাশের যেমন-বাগান, ছাদের  দিকের সাজসজ্জাকেই বোঝায়।

বুঝিয়ে বললে, আপনার বাড়িতে ফ্রিজটি কোথায় রাখবেন, খাট-আলমারি কোন বরাবর রাখবেন, ফুলদানিটি কোথায় কীভাবে রাখবেন, দেয়ালের রঙ কেমন হবে, টাইলসের রঙ এবং ডিজাইন কেমন হবে বাগানের ভিউটা কেমন হবে ইত্যাদি সকল খুঁটিনাটি  বিষয় গুছিয়ে সাজিয়ে রাখাই হলো ইন্টেরিয়র ডিজাইন। 

ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেন করবেন

অনেকেই ভাবতে পারেন এত এত  টাকা-পয়সা খরচ করে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করার কী দরকার? দরকার আছে। আপনি সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে আপনার একটা সুন্দর গোছালো শান্তির নীড়ে গেলে মনটা এমনিতেই ভরে যাবে। সেখানে শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবেন। যে গোছানো টা হয়তো আপনি নিজে নানা সমস্যার জন্য করে উঠতে পারবেন না।  

তাছাড়া ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনার বাড়ির সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে দেয়। আপনার বাড়ির সাজসজ্জাই আপনার রুচিশীলতা এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয় ফুটিয়ে তোলে। 

কেউ একজন আপনার বাড়িতে প্রথম  প্রবেশ করে আপনার বাড়িটা একবার দেখলেই আপনার শৌখিনতার এবং ব্যক্তিত্বের আভাস পেয়ে যাবে। আর ঠিক এজন্যই ফ্ল্যাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রয়োজন। 

চলুন, ফ্ল্যাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের আরো কিছু গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জেনে নিই-

সৌন্দর্য বৃদ্ধি

আগেই বলেছি, ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনার বাড়ির সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। এটি আপনার বাড়ি, অফিসের চিত্র সম্পূর্ণরুপে পাল্টে দেয়। 

আপনি চাইলে আপনার ছোটখাটো বাড়িটিকেও ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে নতুন রুপ দিতে পারেন। বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের তুলনা নেই। 

রুচিশীলতা ও নান্দনিকতা

আপনি কতটা মার্জিত এবং রুচিশীল সেটা আপনার বাড়ির সাজসজ্জা, রঙ দেখলেই অনেকাংশে বোঝা যায়। বর্তমানে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমে নিজের শখের বাড়িটিকে খুব সুন্দর করে নতুন রুপ দেওয়া যায়। 

একটি গোছানো, ছিমছাম, আরামদায়ক বাড়িই আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয়। এজন্য ফ্ল্যাটে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গুরুত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের খরচ অনেক বেশি। যার জন্য অনেকের ইচ্ছে থাকলেও করেন না। তাদের জন্য বলছি- বর্তমানে সব ধরনের বাজেটের মধ্যেই ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা যাচ্ছে।   

সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা

আপনারা যারা কর্মব্যস্ততায় বাড়ির কাজে সময় দিতে পারেন না, তাদের জন্য ইন্টেরিয়র ডিজাইন এক বড় সুফল। আপনার সময় না থাকলে কোনো এক ভালো মানের ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের হাতে আপনার সাধ্যের বাজেটের মধ্যে ডিজাইন করতে দিলেন। এতে ডিজাইনারই সব কাজ করে দিবে।

তাছাড়া, ডিজাইন করা থাকলে আপনার বাড়িটিও গোছানো থাকলো। নিয়ম করে আপনাকে প্রতিদিন সময় বের করে সাজানো-গোছানোর জন্য মেধা খরচ করতে হলো না।

জায়গার সদ্ব্যব্যবহার 

ফ্ল্যাটে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গুরুত্ব কতটা তা জায়গার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই বোঝা যায়। “The less is more” এই বিখ্যাত উক্তি ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমেই বাস্তব করা সম্ভব। বাড়িকে সাজাতে খুব বড় জায়গা লাগে না। ছোট জায়গা দিয়েও সুন্দর বাড়ি গোছানো যায়। 

তাছাড়া ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমে বাড়ির প্রতিটি কোনার সুন্দর ব্যবহার সম্ভব। প্রতিটি স্থানই কোনো না কোনো কাজে লাগানো যায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমে। ডিজানাইরদের এমন প্রতিভা রয়েছে যার মাধ্যমে তারা ছোট ছোট জায়গাগুলোকেও মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করতে পারে। 

উৎপাদনশীলতা 

আপনি যে স্থানে বা জায়গায় বসে কাজ করবেন সেই জায়গাটি যদি আপনার মনের মতো না হয়, তাহলে সেখানে বসে কাজ করতে আপনি মনোযোগ দিতে পারবেন না। আর ঠিক এই সমস্যার সমাধানেই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রয়োজন। 

ডিজাইন শুধু বাড়িতে নয়, আপনার অফিস বা কর্মক্ষেত্রেেও করতে পারেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনার কর্মক্ষেত্রকে কর্মীদের জন্য গড়ে তোলে কাজ বান্ধব পরিবেশ হিসেবে। এটির মাধ্যমে  আপনার কর্মস্থলের চারপাশের ভিউ পরিবর্তন করা সম্ভব যা কর্মীদেরকে মানসিক শান্তি দেয় এবং কাজে মনোনিবেশ সহায়তা করে। 

ফলে কর্মীর কাজের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। সাথে সাথে ব্যবসায়ের কার্যক্রমও বাড়তে থাকে। তাই বলা যায় ব্যবসায়ের সফলতা বৃদ্ধিতে অফিসের জন্যও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গুরুত্ব বিশাল। 

মানুষের কাছে বিশেষ আকর্ষণ প্রাপ্তি 

ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমে আপনার বাড়ি বা অফিসটিকে একটি অন্যরকম লুক দেওয়া সম্ভব। যা সবার নজর কাড়তে সহায়ক। বাড়ির ভিন্নরকম সাজসজ্জা সমাজের মানুষের কাছে অবশ্যই প্রশংসনীয়। 

এতে আপনি আপনার বাড়ি বা অফিসের জন্য সবার কাছে একজন রুচিশীল এবং নান্দনিক ব্যক্তিত্বতের পরিচয় পাবেন। 

খরচ সঞ্চয় 

এই অংশটি একটু অবাক করা হলেও এটা সত্যি যে ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনার খরচ কমাতে অনেকাংশে সাহায্য করে। ভাবছেন যে- কীভাবে করে, আমাকেই তো বরং ফিস দিতে হবে? তো চলুন জেনে নিই-

আমরা অনেকেই চাই বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজাতে কিন্তু বেশি খরচ হবে বলে আমরা কোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের দ্বারস্থ হয়না। ফলে নিজেরাই সাজাতে চাই। নিজেরাই সকল জিনিসপত্র কিনে থাকি। আমরা সরাসরি ভোক্তা হওয়ায় দ্রব্যাদির দাম অনেকটা ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। 

অন্যদিকে, আমরা যদি কোনো ডিজাইনার কোম্পানিকে এই দায়িত্ব দিই তাহলে তারা নিজেদের দায়িত্বে সবকিছু কিনে সাজিয়ে দিয়ে থাকেন। ডিজাইনার কোম্পানি যেহেতু ক্লায়েন্টদের নিয়মিত এই সেবা দিয়ে থাকে, সেহেতু তাদের অনেক জিনিসপত্র কিনতে হয়। এতে ডিলার কোম্পানির সাথে তাদের একটা সখ্যতা তৈরি হয় এবং জানাশোনাও থাকে ভালো দোকান সম্পর্কে।  যার ফলে পাইকারি দামে অনেক কমেই ঘর সাজানো জিনিসপত্র কেনা যায়।

তাছাড়া, কোন জিনিসটার কেমন মান এবং কেমন দাম সেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ থেকে ডিজাইনার কোম্পানি ভালো বুঝবে। যার ফলে তারা ন্যায্য দামে ভালো জিনিস কিনতে পারে। 

এজন্যই বলছি, ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা তাদের পরিকল্পিত নকশা অনুযায়ী খুব সহজেই আপনার সাধ্যের বাজেটের মধ্যে আপনার বাড়িটিকে সাজিয়ে দিতে পারে। হয়তো আপনি একটা জিনিস কিনলেন যেটার মান সম্পর্কে আপনি বোঝেননি এবং দুদিন পরের অকেজো হয়ে গেল। তখন আবার নতুন করে কিনতে হবে যা আরো খরচ বাড়ায়।

তাছাড়া, আপনি নন-প্রোফেশনাল হয়ে আপনার মধ্যে যতটা সৃজনশীলতা থাকবে তার থেকে বেশি সৃজনশীলতা এবং দূরদর্শিতা পাবেন প্রফেশনাল ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের মধ্যে। তারা জানে আপনার জানালার সাথে কোন রঙের কোন পর্দাটা ভালো মানাবে। আপনার বাড়ির আলোকসজ্জাটা কেমন হলে ভালো হয় সেটা আনাড়ির তুলনায় ডিজাইনাররাই ভালো বুঝবে।

শেষকথা

ডিজাইনারদেরকে একটি নির্দিষ্ট পরিমানের ফিস দিতে হলেও বাড়ি সাজানোর দায়িত্ব টা একজন প্রফেশনাল ডিজাইনারের হাতেই দিবেন। এতে আপনার বাড়ি বা অফিসের সৌন্দর্য এবং চাহিদা দুটোই বাড়বে। 

আশা করি, আমাদের লেখাটা পড়ে ফ্ল্যাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গুরুত্ব কতখানি সেটা বোঝার বাকি নেই। একটি ফ্ল্যাটকে দৃষ্টিনন্দন করতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের বিকল্প নেই। আমাদের লেখাটি কেমন লাগল তা অবশ্যই  কমেন্ট করে জানাবেন।