সোফা পরিষ্কার করার ঘরোয়া উপায়

সোফা পরিষ্কার করার ঘরোয়া উপায়

July 20, 2022

গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত আসবাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সোফা। ঘরের খাটের পরেই বহুল ব্যবহৃত হয় এই জিনিসটি। তাই এতে ময়লা হওয়ার প্রবণতাও অনেক বেশি। কিন্তু যেকোনো ময়লা জিনিসই স্বাস্থের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি দেখতেও বিশ্রী লাগে।

এজন্য অন্যান্য আসবাবপত্রের মতো সোফাও পরিষ্কার করতে হয়। সাধারণত বছরে ২/৩ বার পরিষ্কার করলেই চলে। তবে সোফাটি যদি হয় কাপড় বা চামড়ার তৈরি তাহলে এই সংখ্যা বাড়াতে হবে।

যেহেতু সোফা পরিষ্কার করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ তাই এজন্য একটু কৌশলী হতে হয়। আজকের এই লেখার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবো সোফা পরিষ্কার করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। তো আসুন মূল আলোচনায় আসা যাক।

কীভাবে সোফা পরিষ্কার করবো?

সোফা পরিষ্কার করার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। এটি দিয়ে পরিষ্কার করা অবশ্য সহজও বটে। যদি বাড়িতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার না থাকে তাহলে অন্য উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। এজন্য পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে সমপরিমাণ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে নিতে হবে। সোফা পরিষ্কারের কাজ শুরুর পূর্বে কুশন সহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখুন।

এরপর ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে পরিষ্কার ও শুকনো একটি টুকরো কাপড় ভিজিয়ে তা দিয়ে সোফা পরিষ্কারের প্রাথমিক কাজ শুরু করতে হবে। যেসকল সোফায় বেশি খোদায় করা বা ফোকফাকর থাকে সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

এজন্য একটি রঙ করার ব্রাশ অথবা পুরনো টুথব্রাশ নিন এবং সেটি ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে ভিজিয়ে নিন। এরপর এটা দিয়ে ময়লা জমে থাকা স্থানে বারবার ঘষতে থাকুন।

তবে অনেক চেষ্টার পরেও যদি কাঙ্খিত ফলাফল না পান তাহলে ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে কিছুটা বেকিং সোডা মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সোফার দাগ, ময়লা পরিষ্কার করা হয়ে গেলে একটি পরিষ্কার ও শুকনো কাপড় দিয়ে সোফা পরিষ্কার করে শুকাতে দিন। এরপর দেখবেন আপনার সোফাটি আবার নতুনের মতো দেখাচ্ছে।

কীভাবে ফেব্রিক সোফা পরিষ্কার করবো?

কাঠের বা অন্যান্য সোফা পরিষ্কারের জন্য যে যে উপায় উপরে দেখানো হয়েছে, ফেব্রিক সোফা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও সেগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে এখানে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন আপনার পছন্দের সোফাটি নষ্ট না হয়ে যায়।

প্রথমে সোফার উপরে সবখানে কিছু পরিমাণ বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন। এবং এবার এটিকে ৩০-৫০ মিনিটের জন্য রেস্টে রেখে দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে বেকিং সোডার সাথে সোফায় লেগে থাকা ময়লার রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে ময়লাগুলো সোফা থেকে আলগা হয়ে যাবে।

৩০-৫০ মিনিট অপেক্ষা করার পরে বেকিং সোডা মুছে ফেলার জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করুন। আর বাড়িতে যদি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার না থাকে তাহলে একটি বড় ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।

এরপর একটি স্প্রে বোতলে এক কাপ কুসুম গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার, ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডা, পরিমাণ মতো লিকুইড ডিশ ওয়াশ এবং একটি কাগজি লেবুর রস ভালোভাবে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে।

মনে রাখবেন, পানিতে উক্ত উপাদানগুলো মেশানোর কারণে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া হবে, যা পানিতে বুদবুদ তৈরি করবে। তাই এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

এপর্যায়ে মিশ্রিত দ্রবনটি সোফার সব জায়গায় ভালোভাবে স্প্রে করে দিন। এমনভাবে স্প্রে করা যাবে না যাতে পানি চুপচুপে হয়ে যায়, আবার খুব হালকা করেও স্প্রে করা যাবে না।

স্প্রে করা শেষ হলে সেটাকে শুকাতে দিন। এরপরেও কোনো দাগ বা ময়লা থাকলে তা হালকে ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই হয়ে যাবে।

কীভাবে মাইক্রোফাইবার সোফা পরিষ্কার করবো?

মাইক্রোফাইবারের সোফা পরিষ্কার করার পূর্বে জেনে নিন আপনার সোফাটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে কিনা। সোফা পরিষ্কারের জন্য প্রথমেই আপনার কিছু উপকরণের প্রয়োজন হবে। সেগুলো হলো রাবিং অ্যালকোহোল, সাদা বা হালকা রঙের এক টুকরো স্পঞ্জ, একটি ব্রাশ, স্প্রে বোতল।

প্রথমে স্প্রে বোতলে কিছু রাবিং অ্যালকোহোল নিন এবং সোফার যেখানে যেখানে ময়লা বা দাগ জমে আছে সেই স্থানগুলোতে ভালোভাবে স্প্রে করে দিন। এবার স্পঞ্জ দিয়ে প্রথমে হালকা করে ঘষুণ। এতে কাজ না হলে একটু বেশি মাত্রায় ঘষতে থাকুন। সাদা অথবা হালকা স্পঞ্জ ব্যবহার করা জরুরি। কারণ যদি গাড় রঙের স্পঞ্জ ব্যবহার করা হয় তাহলে সোফায় স্পঞ্জের রঙ লেগে যেতে পারে বা সোফার রঙ নষ্ট হয়ে যাবে।

রাবিং অ্যালকোহোল শুকিয়ে যাওয়ার পরে আপনি হয়তো খেয়াল করবেন যে সোফার কিছু কিছু জায়গা শক্ত হয়ে আছে, আগের মতো সফট নেই। এই সমস্যা দূর করার জন্য শক্ত হয়ে যাওয়া স্থানগুলোতে ব্রাশ দিয়ে আলতো করে ঘষুন, এতে সহজেই সেই স্থানগুলো আগের মতো সফট হয়ে যাবে।

 

কীভাবে চামড়ার সোফা পরিষ্কার করবো?

মাইক্রোফাইবারের সোফা আর চামড়ার তৈরি সোফা পরিষ্কারের পদ্ধতি প্রায় একই রকম। তবে চামড়ার সোফায় অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা যাবে না, অন্যাথায় পানির কারণে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

চামড়ার সোফা পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে সম্পূর্ণ সোফা ও এর ভাজে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে নিন। যদি হাতের কাছে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার না থাকে তাহলে শুকনো ও পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করতে পারে, যদি এটি দিয়ে পরিষ্কার করা একটু কষ্টসাধ্য।

এপর্যায়ে একটি বোলে সমপরিমাণ পানি ও সাদা ভিনেগার মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এর পরিবর্তে আপনি রাবিং অ্যালকোহোলও ব্যবহার করতে পারেন।

এরপর সাদা ও পরিষ্কার মাইক্রোফাইবারের তৈরি কাপড় ভিনেগার মিশ্রিত অথবা রাবিং অ্যালকোহোলে ভিজিয়ে তা দিয়ে সোফার ময়লাযুক্ত স্থানে আলতোভাবে ঘষতে থাকুন। এভাবে একই পদ্ধতিতে কয়েকবার ঘষামাজ করলে দাগ ও ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এরপর শুকতো সুতি কাপড় অথবা মাইক্রো ফাইবারের কাপড় দিয়ে সোফাটি পরিষ্কার করে শুকাতে দিন। সোফা সম্পূর্ণভাবে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং এর আগে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

সোফা স্টিম ক্লিন করার উপায়

সোফা পরিষ্কার করার আরেকটি উপায় হলো স্টিম ক্লিনিং। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি প্রায় সব ধরনের সোফা এবং ফার্নিচারে ব্যবহার করা যায় এবং এতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হয় না।

যদি সব সোফার ক্ষেত্রে কেমিক্যাল ক্ষতিকর না, তবে কিছুক্ষেত্রে এটি সত্যিই ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য অনেকেই স্টিম ক্লিনিংকে বেছে নেয়। স্টিম ক্লিন করার উপায় নিচে বর্ণণা করা হলো।

স্টিম ক্লিন করার জন্য বাজার থেকে একটি স্টিম ক্লিনার মেশিন কিনে আনুন এবং তার সাথে দেওয়া প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে কাজ শুরু করুন। সোফা পরিষ্কার করার পূর্বে এর থেকে কুশন কাভারগুলো সরিয়ে নিন এবং এক পাশ থেকে স্টিম ক্লিনিং শুরু করুন।

একাংশ পরিষ্কার করা হয়ে গেলে অন্য অংশে যাওয়ার পূর্বে ততক্ষণ অপেক্ষা করুন যতক্ষণ না এটি শুকিয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার করার সুবিধার্থে সোফাটিকে দেওয়ালের কাছ থেকে দূরে এবং ফাকা স্থানে সরিয়ে আনুন। এতে চারপাশে ঘুরে ঘুরে কাজ করতে সুবিধা হবে।

স্টিম ক্লিন করার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকবেন যেন একই স্থানে অধিক চাপ দেওয়া না হয়। যেহেতু তাপ ও বাতাস ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা হয় তাই একই স্থানে বেশিক্ষন চাপ দিলে সেখানে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। পরিষ্কার করা শেষ হয়ে গেলে এটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

ইতি কথা

তো এই ছিলো কয়েক ধরনের সোফা ঘরোয়া পদ্ধতিতে পরিষ্কার করার উপায়। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের সময় বৃথা যায়নি। তবে পরামর্শ থাকবে, যেকোনো কাজ করার পূর্বে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া। আজকের লেখাটি এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments