ড্রইং রুম শুধুমাত্র একটি বসার স্থান নয়, বরং এটি আপনার ব্যক্তিত্ব এবং রুচির প্রতিফলন। একটি সুন্দর ও সাজানো-গোছানো ড্রইং রুম আপনার বাসার বাকি অংশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এজন্য অনেক সময় ড্রয়িং রুমকে বাসার প্রাণকেন্দ্র বলা হয়।
আপনার বাসার ড্রয়িং রুমকে যদি নতুন করে সাজাতে চান কিংবা বর্তমান সাজসজ্জাকে আপগ্রেড করতে চান তাহলে আজকের ব্লগে আলোচিত এই ৫টি টিপস ও ট্রিকস আপনার ড্রইং রুমকে একটি স্টাইলিশ এবং আরামদায়ক অভয়ারণ্যে রূপান্তর করতে সহায়তা করবে।
Contents
কার্যকর স্থান ব্যবস্থাপনা একটি গোছানো ড্রইং রুম তৈরি করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রুমকে সাজানোর পূর্বে রুমের মাপ নিন এবং সে মাপ অনুযায়ী কোথায় কোন ফার্নিচার রাখতে চান খাতায় তার একটা ড্রাফট তৈরি করে নিন।
এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফার্নিচার কিংবা সাজসজ্জা আপনার ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করবে।
ড্রয়িং রুমের সাজসজ্জার সাথে মিল রাখতে অনেকেই অনেক ধরনের রঙ ব্যবহার করে যা কোনো নির্দিষ্ট একটা থিমকে নির্দেশ করে। আপনার বাসার ড্রয়িং রুমকে নির্দিষ্ট থিম দিতে এর দেয়ালগুলো রঙ করতে নির্দিষ্ট রঙে সাজাতে পারেন।
এছাড়াও সাদা, আকাশী, খাকি কিংবা ধূসর রঙের মতো যেকোনো লাইট কালার ব্যবহার করতে পারেন। এধরনের রঙ ব্যবহারের বড় সুবিধা হলো ঘর অনেক খোলামেলা ও আয়তনে বড় দেখায়।
পাশাপাশি একটি দেয়ালকে অ্যাকসেন্ট ওয়াল বানাতে পারেন। অ্যাকসেন্ট ওয়াল বলতে ঘরের এমন দেয়ালকে বোঝায় যা অন্য দেয়ালগুলো থেকে রঙে ও নকশায় আলাদা।
ড্রয়িং রুমের অন্য দেয়ালগুলো হালকা রঙের হলে অ্যাকসেন্ট ওয়ালটি গাড় রঙ দিতে পারেন। সেই সাথে কোনো প্যাটার্ন বা ওয়ালপেপার ব্যবহার করতে পারেন।
ড্রয়িং সাজানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো সঠিক আলোকসজ্জার ব্যবহার করা। ঘরের আলোকসজ্জার কাজে FLuorescent Light এর পরিবর্তে Warm LED ব্যবহার করতে পারেন। এলইডি তুলনামূলক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং টেকসই হয় দীর্ঘদিন।
সুন্দর আলোকসজ্জার জন্য সিলিং লাইট, ফ্লোর ল্যাম্প অথবা ঝাড়বাতি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও দেয়ালকে আলোকসজ্জা দিয়ে সাজাতে জার লাইট বা স্ট্রিং লাইট ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে এধরনের অনেক ডিজাইনের ডেকোরেটিভ লাইট পাওয়া যায়।
ঘরের আলোকসজ্জার সময় খেয়াল রাখবেন তা যেন আপনার ঘরের রঙ ও ভাইভের সাথে সমন্বয় করতে পারে।
ড্রয়িং রুম সাজানোর কাজে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন সরঞ্জাম যুক্ত করতে পারেন। যেমন একটি দেয়াল ঘড়ি আপনার ঘরের দেয়ালে বিশেষ মাত্র যুক্ত করবে।
বাজারে আধুনিক ডিজাইনের বিভিন্ন দেয়াল ঘড়ি কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া অ্যান্টিক ডিজাইনের ঘড়িও পাওয়া যায়, এগুলো দেখতে অনেক বেশি অ্যাস্থেটিক লাগে।
ড্রয়িং সাজানোর আরেকটি জনপ্রিয় উপকরণ হলো ওয়াল ফ্রেম। এগুলো ধরণভেদে অনেক ডিজাইনের ওয়াল ফ্রেম বাজারে পাওয়া যায়।
কিছু ফ্রেমে চিত্রশিল্পীদের পটু হাতে আঁকা চিত্র থাকে, কিছু ফ্রেমে আলোকচিত্রীদের পেশাদার হাতে বন্দি স্থিরচিত্র থাকে, আবার কিছু কিছু ফ্রেমে নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রিয়জনের কিংবা যেকারো ছবি সংযুক্ত করা যায়।
এসব ফ্রেম কেনার সময় খেয়াল রাখবেন এগুলো যেন এমন রঙের হয় যেগুলোকে আপনার ঘরের দেয়াল থেকে সহজেই আলাদা করা যায়।
অর্থাৎ দেয়াল হালকা রঙের হলে, গাড় রঙের ফ্রেম নির্বাচন করবেন। আর দেয়াল গাড় রঙের হলে, হালকা রঙের ফ্রেম নির্বাচন করবেন।
এই অংশটি ব্লগের শেষে রেখেছি, তার মানে এই নয় যে এটি অন্যগুলো থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ। বরং বাসার যেকোনো ঘর বা অংশ সাজানোর জন্য সর্বপ্রথম আমাদের মাথায় যেটি আসে তা হলো নান্দনিক ডিজাইনের আসবাবপত্র।
আসবাবপত্র কেনার আগে ঘরের মাপ নিন এবং কোথায় কোন আসবাব রাখবেন সেটার একটা পরিকল্পনা করুন। ঘরের মাপ অনুযায়ী আসবাবপত্র কিনলে সুন্দরভাবে ও সহজেই সেগুলো স্থাপন করা যাবে।
বসার জন্য সোফা কিংবা রঙ-বেরঙের বিন ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। বিন ব্যাগ দামে সহজলভ্য ও দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া একটি কফি চেয়ার, বুকসেলফ, টিভি স্ট্যান্ড রাখতে পারেন।
গাছ এমন একটি জিনিস যা যেকোনো সাজসজ্জায় নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। একটি সেলফে বা ঘরের কোণে পথস, স্পাইডার প্ল্যান্ট, সাকুলেন্ট, জেজে প্ল্যান্টের মতো কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন।
মার্কাস টুলিয়াস সিসেরো এর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে “বই ছাড়া ঘর, দেহ ছাড়া আত্মার মতো”। এই উক্তিটি কোনো ঘরে বইয়ের গুরুত্বকে উদ্ধিতি করে।
আপনার ড্রয়িং রুমে বই থাকলে তা দেখতে যেমনি সুন্দর লাগবে, তেমনি এটি আপনার বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করবে এবং অন্যের কাছে আপনার রুচিশীল ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরবে।
বাসার সাজসজ্জা হচ্ছে বাসা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্বের বহিপ্রকাশ। আপনার বাসা বা ড্রয়িং রুম দেখতে সুন্দর হলে এটি অন্যদের কাছে আপনার একটি সুন্দর ব্যক্তিত্ব তুলে ধরে।
আর সাজসজ্জার কাজে যদি নিজের তৈরি ও নকশা করা উপকরণ ব্যবহার করা যায় তাহলে সেটি আরো নিজের মনমতো হয়।
বসার ঘর কিংবা বাসা সাজাতে ঘরে তৈরি বিভিন্ন DIY প্রজেক্ট, হ্যান্ডক্রাফট ব্যবহার করতে পারেন। অব্যবহৃত জিনিস ফেলে না দিয়ে সেগুলো রিসাইকেল করতে পারেন।
এতে একদিকে যেমন খরচ বাঁচবে, অন্যদিকে পরিবেশের উপরে ফেলনা জিনিসের মারাত্মক প্রভাব কমবে।
ইউটিউব ও ইন্টারনেটে ঘরে তৈরির অসংখ্য DIY ও Handcraft প্রজেক্টের টিউটোরিয়াল পাবেন। সেগুলো দেখে শিখতে পারেন। যতটা সম্ভব রিসাইকেল করার চেষ্টা করবেন।
আপনার বাসার প্রাণকেন্দ্র তথা ড্রয়িং রুমকে সুন্দর, আকর্ষণীয় ও প্রশান্তিকর স্থানে পরিণত করতে আজকের ব্লগে উল্লেখিত বিষয়গুলো কাজে লাগবে। এর পাশাপাশি ব্যক্তি সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে আরো সৌন্দর্য ও নতুনত্ব আনতে পারেন।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। আপনার দিনটি শুভ হোক!
July 1, 2024