May 20, 2022
Contents
বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে শান্তির স্থল হলো নিজ গৃহ। সবারই একটা স্বপ্ন থাকে, নিজের সুন্দর ও পরিপাটি একটা বাড়ি থাকবে যেখানে পরিবার সহ কয়েক প্রজন্ম শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারবে।
প্রতিনিয়ত পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে, আর সেই সাথে মাথাপিছু বাসযোগ্য জমির পরিমাণ কমতে থাকছে। এই বর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসিক স্থান নিশ্চিত করতে বহুতল ভবনের যে কোনো বিকল্প নেই, তা আমরা সবাই এখন বিশ্বাস করতে শিখে গিয়েছি।
আর বাংলাদেশের প্রায় সকল উন্নয়নই আজ মূলত রাজধানী কেন্দ্রীক। এই সুবিধার জন্য আবাসিক বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সকলের চাহিদার শীর্ষে থাকে রাজধানী ঢাকা শহর। ঢাকার বুকে একটুকরো জমি যেন সোনার চেয়েও দামী। আর তার ওপর যদি থাকে সুন্দর একটি বাসভবন, তাহলে তা সোনায় সোহাগা।
তবে চাইলে সবকিছু এত সহজভাবে ও দ্রুত তো হয়ে যায় না। এখানে চলে আসে কিছু নিয়মকানুন ও আনুষ্ঠানিকতার বিষয়। বাড়ি নির্মাণ ছাড়াও কর্পোরেট ভবন ও শপিং মল প্রভৃতি নির্মাণ করতেও প্রয়োজন পড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি।
মেনে চলতে হয় বিভিন্ন আইন কানুন ও বিধি-নিষেধ। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো, রাজধানী ঢাকায় ভবন নির্মানের অনুমোদন কীভাবে পাবো। এছাড়াও অন্যান্য করণীয় ও সতর্কতা সম্পর্কেও জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
রাজধানী ঢাকা শহর হোক কিংবা অন্যান্য জেলা শহর বা গ্রামাঞ্চল, বাসা-বাড়ি বা কর্পোরেট ভবন নির্মানের আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে রেহাই পাওয়া যেতে পারে কোটি টাকার লোকসান থেকে। তাই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুকিগুলো উল্লেখ করে নিম্নক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে।
রাজধানী ঢাকাকে পরিবেশ বান্ধব ও মানুষের বাসযোগ্য করতে সকল ভবন নির্মাণ নকশার অনুমোদন দিয়ে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক। এখানে ভবন তৈরি করতে হলে সরকারি বিধি-নিষেধ ও “ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮” মেনে চলতে হবে। গণপূর্ত মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রনাধীন এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজই হচ্ছে বিভিন্ন ভবন নকশার অনুমোদন দেওয়া।
ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো বিধিমালা লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ করলে সম্পূর্ণ ভবন বা এর অংশবিশেষ নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে ভেঙে দেওয়ার অধিকার রাখে রাজউক কর্তৃপক্ষ। তাই নকশার অনুমোদন পেতে হলে মেনে চলতে হবে সঠিক পন্থা। চলুন এবার জেনে নিই, রাজউক থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে কী কী জানা ও করা জরুরি।
সেগুলো হলো –
১. প্রথমেই জেনে নিতে হবে আপনি যে জমিতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন চাচ্ছেন সেটা রাজউকের কোন ড্যাপ বা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান এর অন্তর্ভূক্ত। এটা জানার জন্য প্রয়োজন হবে আপনার জমির দাগ নম্বর, মৌজা নম্বর। এই বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির সহায়তা নিতে পারেন অথবা নিজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন। যদি আপনার জমিটি রাজউকের আবাসিক এলাকার অন্তর্ভূক্ত হয় তবেই আপনি সেখানে আবাসিক বাড়ি এবং যদি শিল্প এলাকার অন্তর্ভূক্ত হয় তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্টান তৈরি করতে পারবেন।
২. রাজউক কর্তৃক নির্ধারিত নকশা অনুমোদনের আবেদন ফরম ৪০১ সংগ্রহ করে তা সঠিক তথ্য দিয়ে ও যথাযথ উপায়ে পূরণ করতে হবে।
৩. শুধু আবেদন ফরম পূরণ করলেই চলবে না, সাথে জমা দিতে হবে নির্দিষ্ট পরিমান ফি। এজন্য রাজউক কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে ব্যাংক জমার রশিদ সংগ্রহ করতে হবে, যা পরবর্তীতে আবেদন ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।
৪. ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ির নকশা ডিজাইন পাশ করতে জমি রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি, খাজনা, জমা, খারিজ সিএস, আরএস, মৌজা, থানার নাম, অঙ্গীকার নামা ইত্যাদি নির্ধারিত ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।
৫. প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন বাড়ির নকশার অনুমোদন পেতে বরাদ্দপত্র, কিস্তি পরিশোধের রিসিট, ভূমি জরিপের নকশা, লিজ দলিল এবং তৃতীয় ব্যক্তিকে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পাওয়ার অফ এটার্নী ইত্যাদি আবেদন পত্রের সাথে জমা দিতে হবে।
৬. নির্দিষ্ট ভূমি ব্যবহারের জন্য রাজউক কর্তৃক নির্ধারিত ছাড়পত্র, ব্যাংকে সার্ভিস চার্জ পরিশোধের রশিদ ও প্রস্তাবিত ভবন নকশার একটি কপি জমা দিতে হবে।
৭. নকশা প্রনয়নকারী প্রকৌশলী বা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের নাম, যোগাযোগ নম্বর ও ঠিকানা সহ ৮ কপি স্থাপত্য নকশা রাজউক কর্তৃক নির্ধারিত কাগজে অ্যামোনিয়া প্রিন্ট করে আবেদন ফরম ৩০১ এর সাথে জমা দিতে হবে।
৮. ভবন নকশার সাথে রাজউকের Detailed Area Plan অনুযায়ী প্রস্তাবিত ভূমির কিছু জায়গার সয়েল টেস্টের কপিও জমা দিতে হতে পারে।
আবেদন করার পর রাজউক কর্তৃপক্ষ আপনার কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এরপর তারা আপনার প্রস্তাবিত ভূমি স্বশরীরের পরিদর্শন করতে আসবেন। সবকিছু দেখার পরে যদি তারা সন্তুষ্ট হয় তবে আপনার প্রস্তাবিত ভূমিতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিবেন।
উপরের প্রক্রিয়াটি যদি বুঝতে সমস্যা হয় অথবা জটিল মনে হয় তাহলে আপনাকে অনুরোধ করবো একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা সনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে। তারাই আপনার হয়ে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে উক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। আর আশা করছি, আজকের এই পোস্ট থেকে অনেকটাই স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছেন ভবণ নির্মাণের অনুমোদন কীভাবে পাওয়া যায় সে বিষয়ে।
Thank you
We are glad to see you here. Thanks.