আসসালামু আলাইকুম,অর্থ সংকুলানের অভাবে জমি কিনতে পারছেন না? বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না? বাড়ি মেরামত করতে পারছেন না?
এখন আর চিন্তা নেই। এ সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে চলে এসেছে বিভিন্ন ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হোম লোনের। আজকের দিনে সবাই-ই চায় নিজের জন্য একটি সুন্দর বাড়ি করতে। আপনার মনেও যদি এরকমই চাওয়া থাকে তাহলে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরণের হোম লোন শিরোনামের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
বাংলাদেশের বিভিন্ন হোম লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার পরামর্শ রইল। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
Contents
প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে যারা বাড়ি করতে পারছেন না,তাদেরকে জামানতের বিপরীতে অর্থের সংকুলান করে একটি মনের মতো বাড়ি বানানোর সুযোগ করে দেওয়ার অর্থ ব্যবস্থাই হলো হোম লোন।
আগে এদেশের এই হোম লোনের আওতায় শুধু উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাই ছিল। কিন্তু এখন এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে কৃষক থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তদেরকেও সরল সুদে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান হোম লোনের সুযোগ দিচ্ছে।
এরকম একটি প্রতিষ্ঠান হলো- Bangladesh House Building Finance Corporation (BHBFC)।
এখন অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন ধরনের হোম লোনের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশে গৃহায়নের খাতটিকে এসব হোম লোন ব্যবস্থা বৃহৎ থেকে বৃহত্তর করছে। নিচে প্রধানত ৫টি হোম লোনের প্রকারভেদ দেওয়া হলো-
এবার আসুন,উপরিউক্ত হোম লোনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
যে লোন ব্যবস্থায় ভূমি বা জমি কেনার জন্য ঋণ বা লোন প্রদান করা হয়ে থাকে,তাকে ল্যান্ড পারচেজ লোন বলে। এ লোন ব্যবস্থার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. জমির কেনার মোট ব্যয়ের ৭০%-৭৫% পর্যন্ত পরিমাণ অর্থ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে থাকে।
২. লোনের সময়সীমা সর্বোচ্চ ১২ বছর হয়ে থাকে যদিও অন্যান্য লোন ব্যবস্থায় আরও বেশি সময়সীমা হয়ে থাকে।
৩. এ লোনে সুদের হার প্রতিষ্ঠানভেদে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
৪. জমির মূল্য সবসময় উর্ব্ধমুখী হওয়ায় খুব সহজে এবং সহজ শর্তেই ল্যান্ড পারচেজ লোন সুবিধা পাওয়া যায়।
গ্রাহকের পছন্দমতো পুরাতন বা নতুন কোনো বাড়ি কেনার সাপেক্ষে লোন হিসেবে অধিকাংশ ব্যয় সংকুলান করার ব্যবস্থাই হলো হোম পারচেজ লোন।
হোম পারচেজ লোন বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরণের হোম লোনের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি লোন ব্যবস্থা। হোম লোনের ওপর গ্রাহক ট্যাক্স ডিডাকশন বা ট্যাক্স ছাড়ের জন্য দাবি করতে পারবে। হোম লোনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
১. বাড়ি কেনার জন্য মোট ব্যায়ের ৭০-৮৫% পর্যন্ত ব্যয়ই হোম পারচেজ লোন হিসেবে পাওয়া যায়।
২. এ লোনের সময়সীমা ১-২৫ বছর পর্যন্ত।
৩. এ লোনের সুদের হারও প্রতিষ্ঠানভেদে বিভিন্ন রকমের হয়। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে চলমান সুদের হার ৯-১৪%।
গ্রাহকেরা নির্মিত কোনো বাড়ি না কিনে নিজেই নিজের ইচ্ছে মতো বাড়ি বানানোর ইচ্ছায় অর্থায়নের জন্য যে লোন নিয়ে থাকে তাকে হোম কনস্ট্রাকশন লোন বলে।
এ লোনের মাধ্যমে গ্রাহক নিজে মনের মতো করে বাড়ি বানাতে পারে। হোম কনস্ট্রাকশন লোনে মোট ব্যায়ের ৮০% পর্যন্ত লোন দেওয়া হয়। এ লোনের উপরেও ট্যাক্স ছাড়ের দাবি করা যায়।
১. আপনি যে জমির ওপর বাড়িটি বানাবেন, আপনার সেই জমির মালিকানা কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে।
২. সম্পূর্ণ বাড়িটি তৈরি করতে মোট যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেটা আগে থেকে অনুমান করতে হবে।
৩. গ্রাহককে বাড়িটি ৫ বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে। ৫ বছরের মধ্যে শেষ করতে না পারলে গ্রাহক হোম লোনের ওপর ট্যাক্স ছাড়ের জন্য দাবি করতে পারবে না।
কারণ বাড়িটি নির্মাণ শেষ করে Completion সার্টিফিকেট পাওয়ার পরই ট্যাক্স ছাড়ের জন্য আবেদন করতে হয়।
গ্রাহক যদি তার বাড়িটাকে নতুন করে বর্ধিত করতে চাই, অর্থাৎ বাড়িতে নতুন ফ্লোর/রুম/বাথরুম/কিচেন/বেলকনি ইত্যাদি আ্যড করার জন্য যে লোন নিয়ে থাকে তাকে হোম এক্সটেনশন লোন বলে।
এ লোনে মোট ব্যয়ের ৭০-৮০% পর্যন্ত অর্থ ঋণ হিসেবে পাওয়া যায়। এ লোনের সময়সীমা সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত। বাংলাদেশের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানই হোম এক্সটেনশন লোন দেয় না, সাধারণত নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো এই ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে।
বাড়িকে নতুন করে মনের মতো সাজানোর জন্য রঙ করতে,পাইপিং করতে, টইলস লাগাতে ইত্যাদি মেরামত করতে যে লোন নেওয়া হয় তাকে হোম ইমপ্রুভমেন্ট লোন বলে।
এ লোন বাংলাদেশে তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি এখনো। এ লোনের সময়সীমা অন্যান্য লোন থেকে কম। সুদের হারও প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হয়। এ লোন ব্যবস্থায় ট্যাক্স ছাড়ের কোনো দাবি করা যায় না।
বাংলাদেশে আরো বিভিন্ন ধরনের হোম লোন নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সেরকম আরো কয়েকটি লোন সম্পর্কে জানা যাক-
টপ আপ হোম লোনঃ টপ আপ হোম লোন বলতে আগের নেওয়া লোনের সাথে নতুন লোন যোগ করা।
অর্থাৎ -গ্রাহক একবার লোন নেওয়া সত্ত্বেও বাড়ি নির্মাণে যদি ব্যয় সংকুলানে যথেষ্ট না হয় তাহলে নতুন ভাবে আবারও লোন নেওয়ার ব্যবস্থা। মোদ্দাকথা, একাধিকবার লোন নিয়ে লোনের পরিমাণ বাড়ানোর ব্যবস্থা।
ব্রিজ হোম লোনঃ কোনো গ্রাহক তার বর্তমানে বিদ্যামান বাড়িটি বিক্রি করে নতুন একটি বাড়ি কেনার জন্য যে লোন নিয়ে থাকে তাকে ব্রিজ হোম লোন বলে।
এ লোনের পরিমাণ তার বর্তমান বাড়ির বাজার মূল্য অনুযায়ী ঠিক হয়। কারণ ব্রিজ হোম লোনের টাকা বিদ্যামান পুরাতন বাড়িটি বিক্রি করে পরিশোধ করা হয়।
এনআরআই হোম লোনঃ NRI – Non Resident Indian, যারা ভারতে বাড়ি নিতে ইচ্ছুক তাদের জন্য এই এনআরআই লোন ব্যবস্থা
জয়েন্ট হোম লোনঃ যখন একের অধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে লোন নেয় তাকে জয়েন্ট হোম লোন বলে। এ লোন শুধু পরিবারের সদস্যরাই একত্রিত হয়ে নিতে পারে।
একটি প্রতিষ্ঠান তো আর যাকে তাকে লোন দিবে না। লোন দেওয়ার জন্য প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানই তার আগামী গ্রাহকের সম্পর্কে অনেক কিছু বিচার বিবেচনা করে। এরপর লোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন ধরনের হোম লোন দেওয়ার জন্য অনেকগুলো বিষয় চিন্তা ভাবনা করে। তার মধ্যে কয়েকটি হলো-
ইন্টারেস্ট রেটঃ প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোন দেওয়ার আগে তাদের ইন্টারেস্ট সম্পর্কে ভাবে। কারণ ইন্টারেস্ট-ই তো ওই প্রতিষ্ঠানের আয়। ইন্টারেস্ট হার একেক প্রতিষ্ঠানে একেক রকম। তবে, বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে লোন গ্রহীতাদের জন্য ৯% নির্ধারণ করে দেয় যদিও অনেক প্রতিষ্ঠানে এর কম বেশি হতে পারে।
প্রপার্টি নতুনত্বঃ স্বভাবতই, সবাই নতুনে আসক্তি হয়ে থাকে। হোম লোনের ক্ষেত্রেও এই চাহিদা বা উপলব্ধির উপস্থিতি পাওয়া যায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুরাতন বিল্ডিং এর থেকে নতুন বিল্ডিং এ ইনভেস্ট করতে বেশি আগ্রহী হয়। এজন্য হোম লোনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত পুরোনো বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে লোন দিয়ে থাকে।
মাসিক আয়ঃ মাসিক আয়ের ওপর নির্ভর করে যে একজন গ্রাহক তার যাবতীয় সব ব্যায় মিটিয়ে লোনের টাকা পরিশোধ করতে পারবে কী না। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলে হোম লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের মাসিক আয়ের হিসাব চায়।
চাকুরিজীবীদের মাসিক বেতন কমপক্ষে ৪০০০০ টাকা এবং ব্যবসায়ীদের বার্ষিক আয় ২০০০০০ টাকা হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লোন দিয়ে থাকে। যদিও, প্রতিষ্ঠান ভেদে আয়ের সীমা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
ডেড বার্ডেন রেশিওঃ একজন সম্ভাব্য গ্রাহকের মাসিক মোট আয়ের বিপরীতে লোন পরিশোধের ক্ষমতা যাচাইয়ের মান। মাসিক আয়ের ভিত্তিতে ডিবিআর (DBR) মান নির্ধারণ করা হয়। যদি আয়ের থেকে ডিবিআর মান বেশি হয় তাহলে লোন দিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারাজ হয়।
বয়সের সীমাঃ হোম লোনের সর্বোচ্চ সময়সীমা প্রায় ২৫-৩০ বছর। বোঝায় যায় যে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী লোন ব্যবস্থা। ঠিক এজন্যই, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের হোম লোনের জন্য বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি সম্পূর্ণ লোন পরিশোধ করতে গ্রাহকের বয়স ৬৫ বছর ছাড়িয়ে যায় তাহলে লোন প্রদানে নারাজ হয়। প্রতিষ্ঠান ভেদে বয়সসীমা কম-বেশি হতে পারে।
ঋণগ্রহীতার পেশাঃ পেশার ওপর হোম লোন প্রাপ্তি অনেকাংশে নির্ভর করে। যদি কেউ কোনো রেপুটেড প্রতিষ্ঠানে রেপুটেড পোস্টে চাকরি করে তাহলে তার হোম লোন প্রাপ্তি অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।
পরিবারে একের অধিক উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি থাকায়ঃ পরিবারে একের অধিক উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি থাকা মানেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লোন পরিশোধর সক্ষমতার একটি পূর্বাভাস। যদি একের অধিক উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি থাকে তাহলে লোনের আবেদনের সময় বিষয়টি উল্লেখ রাখলে লোন প্রাপ্তি অনেকটা নিশ্চিত থাকে।
বাংলাদেশে গৃহায়ণ খাতে বিভিন্ন ধরনের হোম লোন ব্যবস্থা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়গুলোকে প্রসারিত করছে। অল্প আয়ের মধ্যেও প্রায় সবাই একটা মনের মতো বাড়ি কিনতে বা বানাতে পারছে।
আপনারা যাতে খুব সহজে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের হোম লোন পেতে পারেন, সে বিষয় জানানোর চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে কমেন্টে জানাবেন। সাথে মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা আমাদের কে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
August 16, 2022