নিজের সুখের আভাস সাজাতে কার না ভালো লাগে! তবে একটি অ্যাপার্টমেন্ট যত ছোট হয়, এটি সাজানো ততই কঠিন হয়ে পড়ে। আর ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে যে ভুলগুলো একেবারেই করা যাবে না সেই ভুলগুলো নিয়েই আমাদের আজকের এই ব্লগ লেখা।
মূলত ছোট অ্যাপার্টমেন্ট বা স্টুডিও ঘরগুলো সাজানোর ক্ষেত্রে আমাদের কে সবার আগে জায়গার সঠিক ব্যবহার এবং ডেকোরেশনের প্ল্যানিং তৈরি করতে হয়। আর ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোর সময় আমরা বেশ কিছু সাধারণ ভুল করে থাকি যার ফলে আমাদের ঘরগুলো দেখতে কিছুটা এলোমেলো এবং আরও ছোট দেখতে লাগে।
আর সেই লক্ষ্যেই, এই আর্টিকেলে আমরা লোকেদের করা এমন কিছু ভুল উল্লেখ করবো যে ভুলগুলো ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে লোকেরা সচারচর করে থাকে।
এছাড়াও আমরা ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু টিপস শেয়ার করব যার ফলে আপনারা সহজেই যে কোনো ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট সুন্দরভাবে সাজিয়ে পরিপাটি করে রাখতে পারবেন।
Contents
ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট গুলো সাজানোর পূর্বে অনেকেই কে কিছু পূর্বে পরিকল্পনা করে থাকেন। এছাড়াও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রগুলোর জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করাও অনেক সময় আপনার মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
তবে, ছোট অ্যাপার্টমেন্ট বা স্টুডিও হোম ডেকোরেশনের আগে আপনাকে নির্ধারন করতে হবে এমন স্থান যা আপনার আসবাবপত্রের জন্য সৌন্দর্য বহন করবে এবং একটি সঠিক জায়গা হিসেবে কাজ করবে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এমন ভুলa করা কাজগুলো যা ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোতে যে ভুলগুলো একেবারেই করা যাবে না।
ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ও দেয়াল রাঙ্গাতে আপনি অবশই পছন্দ করবেন। তবে ছোট অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে রঙ দিয়ে দেওয়াল রাঙ্গানোর সময়।
দেওয়ালে রঙ ব্যবহারের সময় সাধারণত অনেকেই গারো রঙগুলো ব্যবহার করে থাকে। তবে রঙ ব্যবহারের আগে আপনাকে অবশ্যই লাইটিং নিয়ে ভাবতে হবে। নতুবা ভুল রঙ ব্যবহারের ফলে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরিবর্তে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও আপনার ঘর কে আরও বড় করে দেখাতে দেওয়ালের রঙ দারুণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
দেওয়াল কে লাইটিং এর সাথে মানানসই এবং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাদা, অফ হোয়াইট, লাইট গ্রিন, হালকা নীল বা বেবি পিংক রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে। এই রঙ গুলো তুলনামুলকভাবে দেওয়াল কে লাইটিং এর সাথে ফুটিয়ে তোলে। তাছাড়া হালকা রঙ সবসময় ঘরের সৌন্দর্য বহন করে।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে আপনি যদি প্রাকৃতিক আলোর সঠিক ব্যবহার না করেন তাহলে আপনি অনেক বড় একটি ভুল করবেন। প্রাকৃতিক আলো কে প্রতিফলন করার মাধ্যমে আপনার ঘরে সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য আপনি মিরর বা আয়না ব্যবহার করতে পারেন।
ছোট সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট বা স্টুডিও হোম ডেকোরেশনের সময় ঘরের প্রত্যেকটি কোনায় সঠিক লাইটিং আপনার ঘরকে ফুটিয়ে তুলবে দারুণভাবে। দরকার পড়লে চার কোনায়ও লাইট রাখুন। আর ঘরে আলো থাকলে ঘর বড় লাগে ও দেখতেও ভালো লাগে।
আসবাবপত্র সঠিকভাবে নির্বাচন ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলায় অসাধারণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেমানান আসবাবপত্র সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে আসবাবপত্র নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘরে আসবাবপত্রের প্রয়োজন হবে স্বাভাবিক তবে, আপনি যখন একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজাতে যাচ্ছেন, তখন আপনি সেখানে কত পরিমাণ আসবাবপত্র রাখতে চান সে সম্পর্কে চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একটি ছোট জায়গায় অতিরিক্ত পরিমাণের জিনিসপত্রের ব্যবহার জায়গাটিকে আরও ছোট করে। অ্যাপার্টমেন্টে অনেকগুলি ছোট আইটেম রাখাও সমাধান হতে পারে না। প্রভাব একই হবে।
অতএব, সর্বোত্তম উপায় হল বড় আসবাবপত্র বেছে নেওয়া এবং এটি এমনভাবে স্থাপন করা যাতে পরিবেশটি আসলে তার চেয়ে বড় দেখায়। অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরে যদি বড় আসবাব রাখা হয় তবে তা একেবারেই বেমানান হবে। তাই ফার্নিচার বা অন্যান্য আসবাবপত্র কেনার আগে ভালো করে ঘরটা দেখে নিতে পারেন বা মাপ নিয়ে নিতে পারেন।
ঘরের জন্য ফার্নিচার কেনার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে হালকা রঙ এর ফার্নিচার গুলো ঘরের সৌন্দর্য বহন করতে দারুণভাবে ভূমিকা পালন করে। সোফার সামনে টেবিল রাখলে ঘরের জায়গা আরও বড় মনে হয়। তবে আপনি যদি একই ঘরে টিভি রাখতে চান সেক্ষেত্রে দেওয়ালে টিভি রাখতে পারেন। এতে ঘরে ঘরের সৌন্দর্য অখুন্ড্য থাকবে।
ঘর বড় করে দেখানোর আরেকটি উপায় হলো শো-পিস গুলো দেয়ালের তাকে সাজিয়ে রাখা। এতে করে মেঝেতে ফাঁকা জায়গা থাকে ঘরও দেখতে বড় লাগে। এর জন্য পছন্দমত একটি দেয়াল বেছে নিতে পারেন।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি, যে দেয়ালে আয়না সেট করা তার বিপরীতে তাক সেট করা হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন শো-পিস গুলো ফাঁকা ফাঁকা করে রাখা হয়। অতিরিক্ত জিনিস এখানে একদমই বেমানান লাগতে পারে। এরপর তাকে ছোট ছোট ফোকাস লাইট লাগিয়ে নিয়ে ঘর আরও উজ্জ্বল ও আলোকিত করতে পারেন। যা আপনার সুখের আবাস কে আরও নান্দনিক করে তুলবে।
বসার ঘরে বই রাখতে সবাই পছন্দ করেন। কিন্তু ঘর ছোট হওয়ায় কোথায় রাখবেন ভেবে পাচ্ছেন না? তবে, কাজে লাগান ঘরের কর্নারগুলোকে। যেকোনো একটা কর্নার বেছে নিতে পারেন আর তাতে তাক বসিয়ে প্রিয় বইগুলো সাজিয়ে রাখতে পারেন সেই তাকে।
পুরো ঘর সাজানর পর মেঝে সাজাতে ভুলবেন না অবশ্যই। ফ্লোর যতটা খালি রাখা যায় ততই ভালো। ছোট ঘরে কখনই পুরো মেঝে জুড়ে কার্পেট দেয়া যাবে না। মাঝারি সাইজের একটা ম্যাট ফ্লোরে বিছিয়ে রাখতে পারেন যা আপনার ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।
অ্যাপার্টমেন্টের সামসজ্যতা নষ্ট করার আরেকটি কারণ হলো ঘর এলোমেলো রাখা। একটি সুন্দর ও পরিপাটি ঘর কে এলোমেলো করে রাখলে কখনোই সেই ঘরে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে না। তাই অবশ্যই আপনাকে আপনার অ্যাপার্টমেন্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষ করে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট গুলোতে কোনো কিছু এলোমেলো করে রাখলে বা এড়িয়ে গেলে সেটি আপনার পুরো ঘরের সামসজ্য নষ্ট করে দেয়। তাই অবশ্যই আপনাকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
লাস্ট বাট নট দা লিস্ট, ঘর যত মিনিমালিস্টিক আর ছিমছাম রাখা যায় ততোটাই ভালো। ছোট ঘরে যত কম ফার্নিচার রাখা যায় তাতে রুচি আর আভিজাত্য প্রকাশ পায় ততোই বেশি। তাই বলে একে বারেই ফাঁকা করা যাবে না। ঘর ফাঁকা থাকলে হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায় আর ঘরও বড় দেখায়।
খুব সহজ এই কৌশলগুলো ছোট ঘরটাকে যেমন সুন্দর করবে, তেমনি দেখতেও নান্দনিক হবে। ঘর হোক ছোট বা বড়, সাজানোতে বাধা না আসুক। ঘর হোক একেবারেই আপনার মনের মতো!
আশা করি আপনারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন যে, ছোট অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোর সময় কোন কোন ভুলগুলো একেবারেই করা যাবে না।
November 5, 2022