ইট কাঠের অট্টালিকার শহর ঢাকা। যেদিকে দু চোখ মেলে ইট-পাথরের দালান আর অট্টালিকায় টইটম্বুর। ক’দিন আগেও ছিল, ঢাকার আকাশে চোখ মেলে আকাশ দেখতে গিয়ে চোখ আটকে যেতো না। যেখানে ডুপ্লেক্স ভিলাগুলো থেকে অসমাপ্ত আকাশের দেখা মেলত সুন্দরভাবেই। কনস্ট্রাকশন আর রিয়েল এসেস্টের কল্যাণে ঢাকা শহরে বিল্ডিংয়ের চাহিদা যেন এখন স্বপ্নের মতো।
১৪৬৩.৬০ বর্গ কিলোমিটারের জনবহুল আর জনসমাগম ঢাকা শহরকে বলা বিশ্বের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ শহর। প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক লোকের বসবাস। অধিকাংশ উন্নয়ন রাজধানী কেন্দ্রিক হওয়ায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢাকাগামী হওয়াটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর বিপুল এই জনসমাগমের ফলে ঢাকা হয়ে উঠছে মানুষের আবাসনের কেন্দ্রবিন্দু।
নগরায়ণ ব্যবস্থা সম্পন্ন পরিকল্পিত আবাসন স্থান হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর আবাসনের জন্য আকর্ষণীয় হওয়ার পিছনে রয়েছে বহুবিধ কারণ। খুব সহজেই যেকোনো সুবিধা যেন হাতের নাগালে মেলে। কি নেই ঢাকায়? উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আবাসন, সরকারি বেসরকারি কর্মক্ষেত্র, প্রশাসনিক ভবন, স্বনামধন্য হাসপাতাল থেকে শুরু করে উন্নত পড়াশোনার সকল ব্যবস্থা। শুধু কী তাই? রয়েছে বিনোদনের নানা ক্ষেত্র, উৎকৃষ্ট খাবারের জন্য নামি-দামি রেস্টুরেন্ট, আরো কত কী!
এই যখন ঢাকায় প্রায় সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা হাতের নাগালে মিলছে,ঠিক তখনই বসবাসের জন্য ঢাকা হয়ে উঠেছে সকলের নিকট আকর্ষণীয় এবং গ্রহণযোগ্য। ঢাকামুখী সবার এমন আগ্রহের কারণে ঢাকার আবাসন খাত ঘিরে গড়ে উঠা, সকল ক্ষেত্রগুলোর সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে প্রবল। চাহিদা বাড়ছে নানা ধরনের বিল্ডিং এবং ফ্ল্যাটের। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ঢাকাবাসী যে-সব সুবিধাগুলো বিবেচনা করে ফ্ল্যাট বা বিল্ডিংগুলো চাহিদার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখেন তার পুরোটা জানবো।
Contents
ইট-পাথরের অট্টালিকার শহরে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়াটা এখনও যেন দুর্বোধ্য। যার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে, বিল্ডিংয়ে ব্যবহৃত পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ। UNEP এর এক গবেষণা বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হয় এসব ভবন থেকে। আর, এই যখন আবাসনের অবস্থা, ঠিক তখনই আবাসিক এলাকাগুলোতে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠছে আধুনিক সুযোগ সম্বলিত বিল্ডিং। জনগণের চাহিদাকে যথেষ্ট প্রাধান্য দিয়ে বাড়তি সকল সুবিধাগুলো যুক্ত করেই গড়ে উঠছে বিল্ডিং।
বসবাসের জন্য বরাবরই ঢাকা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি শহর। পরিকল্পিত এই শহরে প্রায় সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা মিলছে বলেই ঢাকার অদূরে গড়ে উঠা আবাসিক এলাকাগুলোতে বিল্ডিং ও ফ্ল্যাটের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বসুন্ধরা, গুলশান, ধানমন্ডি, বনানীর মতো চাহিদার শীর্ষে থাকা আবাসিক এলাকাগুলোতে এবং এর বাইরে থাকা সকল এলাকায় প্রতিনিয়তই গড়ে উঠছে হরেক রকমের বিল্ডিং।
আর যে-সব এক্সট্রেরিওর এবং ইন্টেরিয়র সুবিধাগুলো বাসিন্দা কিংবা ক্রেতাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েই ঢাকাবাসী বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের দিকে এগোয়।
যেকোনো ধরনের বিল্ডিংয়ের চাহিদার ক্ষেত্রে এক্সটেরিওর সুব্যবস্থার খুবই গুরুত্ব বহন করে। অবস্থানগত, দৃষ্টিনন্দনের পাশাপাশি, বিল্ডিংয়ের কার্যকারিতা, যাতায়াত সুব্যবস্থা এবং সর্বোপরি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগুলো বিবেচিত থাকে।
মানুষ স্বভাবতই সুন্দরের পূজারি। সুন্দর মনকে শান্ত করে, আত্মাকে উজ্জীবিত করে এবং জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে। ঢাকার মতো দূষণের অত্যধিক মাত্রাযুক্ত শহরে একটু সুন্দর এবং কিছুটা ভিন্নমাত্রা বহন করে এমন বিল্ডিংয়ের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ সবারই। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী নকশা, আধুনিক নকশার আদলে গড়ে উঠা বিল্ডিংগুলো আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দিত হিসেবে পছন্দের তালিকায় সবার শীর্ষে থাকে।
ঢাকার মতো জনবহুল শহরে দক্ষিণমুখী বিল্ডিংয়ের চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতা অন্য যেকোনো এরিয়ার তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি। বিশেষ করে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও লালবাগ সহ দক্ষিণমুখী এলাকার বিল্ডিংগুলোতে সূর্যের আলো বেশি পড়ে। এতে করে দিনের বেলায় পুরো ভবন সূর্যের আলোতে আলোকিত থাকে। তাছাড়া, দক্ষিণমুখী ভবনগুলোতে বাতাস প্রবেশ করে বেশি। এতে তাপমাত্রা কম থাকে এবং বাসিন্দাদের জন্য বসবাস বেশ আরামদায়ক হয়।
অত্যধিক জনসংখ্যার প্রভাবে প্রতিদিনই ঢাকা শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় সকলকে। আর তাই যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো এমন এরিয়ায় গড়ে উঠা বিল্ডিংয়ের চাহিদা খুব বেশি। বিশেষ করে, দ্রুতগামী গণপরিবহন কিংবা আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থায় যাতায়াত করতে তুলনামূলক কম ভোগান্তি পোহাতে হতে হয় এমন আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠা বিল্ডিংগুলোর চাহিদা থাকে বেশি।
জনবহুল ঢাকা শহরে প্রায়ই বিল্ডিংয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নেহাত কম নয়। বিশেষ করে যে-সব বিল্ডিংয়ে অগ্নি নির্বাপকের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার ঘাটতি থাকে সেখানেই তুলনামূলক অগ্নি সংযোগের ঘটনা বেশি ঘটে। এতে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। ঠিক এই বিষয়টাকে মাথায় রেখে, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যধিক ভালো যেমন, বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ভবনে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের সুব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থা এবং সচল অগ্নি সংকেত ব্যবস্থা পর্যাপ্ত থাকে, এমন বিল্ডিংগুলো সবারই চাহিদার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।
এক্সটেরিওর সুব্যবস্থার পাশাপাশি ইন্টেরিয়র সুবিধাগুলোও বিবেচিত থাকে। বিশেষ করে বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ভবনের ভিতরের পরিবেশ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগতসহ অনান্য সুবিধাগুলো গুরুত্ব বহন করে থাকে।
ফ্ল্যাট কিংবা বিল্ডিংয়ে সুবিধার বিষয়টির কথা ভাবলে সর্বপ্রথম মাথায় আসে পরিবেশগত সুবিধা। হবেই না বা কেনো? ঢাকায় পরিবেশ দূষণ একটি বিরাট সমস্যা। আর এই সমস্যা থেকে পরিশ্রান্ত মিষ্টি রোদের আবছা, নির্মল আলো-বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভাবতে তো হবেই।
সারাদিনের কোলাহল আর ক্লান্তিকে নিমিষেই প্রশান্তিতে রূপান্তর করে দেয় এমন কিছুর খোঁজ থাকে সকলের। যেখানে বিল্ডিংয়ের আঙিনা, ছাদ, বারান্দা থেকে শুরু করে এমনকি লবিতে থাকবে সবুজে ছোঁয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠলে যেখানে দেখা মিলবে সবুজ পরিবেশ আর পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের।
এছাড়াও, পরিবেশ দূষন রোধে নবায়নযোগ্য শক্তি, ওয়াটার হারভেস্টিং এবং বায়ু শোধকের মতো সুবিধাগুলোও প্রাধান্যের কাতারে থাকে। কোলাহলের শহরে গ্রাম্য পরিবেশের ছোঁয়া তো সবাই পেতে চায়। যেন নিজের বানানো এক স্বপ্নের গ্রিন বিল্ডিং।
ঢাকা শহরের মতো বড় এবং জনবহুল শহরে অপরাধের মাত্রা প্রবল। দিন কিংবা রাতে নিরাপত্তা বলয়ের ফাঁকে নানাবিধ অপরাধের চিত্র থাকে সচরাচর। আর, এমন অপরাধের চিত্র নিয়ে ঢাকা শহরে বিল্ডিংয়ের চাহিদার মধ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সুবিধাগুলোই প্রাধান্য থাকে সবার। বিশেষ করে প্রবেশদ্বারে সিকিউরিটি গার্ড, সিসি ক্যামেরার সুবিধা, ইলেকট্রনিক গেট, ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার মতো সুবিধাগুলো চাহিদার ক্ষেত্রে অধিক বিবেচিত থাকে।
কর্মমুখী মানুষের অধ্যুষিত নগরী ঢাকার আবাসন খাতে গ্যারেজ সুবিধা রয়েছে এমন বিল্ডিংয়ের চাহিদা থাকে বেশি। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মতো যানজট এবং পার্কিংয়ের প্রকট সমস্যায় গ্যারেজযুক্ত বিল্ডিংয়ের সুবিধা অনেক। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, গাড়ি পরিষ্কারের সুব্যবস্থা, যন্ত্রাংশ মেরামত সহ প্রায় সকল কিছুকে যেন সহজ করে তোলে। গ্যারেজের সুব্যবস্থা থাকলে অতিরিক্ত মালপত্র সংরক্ষণ এবং প্রিয়জন বা অতিথিদের জন্য পার্কিং স্থান হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগও থাকে।
প্রযুক্তির এই বিপুল বিপ্লবের কালে প্রযুক্তির সকল সুবিধাগুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব বহন করে। দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদানের জন্য হাইস্পিড ইন্টারনেট, সকল ধরনের ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ওয়াই ফাই কানেক্ট, বিল্ডিংয়ের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং জ্বালানি খরচ হ্রাসে সেন্সরের মতো সুবিধাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মোবাইল ডিভাইস কিংবা অন্যান্য কীপ্যাডের মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট বা অফিসের দরজা খুলতে ইলেকট্রনিক লকের সুবিধাগুলো তো রয়েছেই।
শহরে বসবাসের উদ্দেশ্যে আসা নগরবাসী ফ্ল্যাট কিংবা বিল্ডিংয়ে পরিবেশগত সুবিধা, নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো ফ্ল্যাট কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট পছন্দে সর্বাধিক অগ্রাধিকারে রাখেন। বিশেষ করে সকলে একসাথে বসে আহার করার জন্য ডাইনিং রুম, অতিথিদের বিশ্রামের জন্য ছোট্ট কিংবা মাঝারি আকারের গেস্ট রুম, ব্যক্তিগত সভা কিংবা বৈঠকের জন্য একটি নির্দিষ্ট কনফারেন্স রুম সুইমিং পুল এবং জিমের সুবিধাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
জনবহুল এই ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকাগুলোতো প্রতিনিয়ত ইট-পাথরের অট্টালিকা গড়ে উঠছে। আর, ঢাকাবাসী তাদের বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট পছন্দের ক্ষেত্রে এক্সটেরিওর এবং ইন্টেরিয়র সুবিধাগুলোকে অত্যধিক প্রাধান্য দিয়ে স্বপ্নের অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা ফ্ল্যাট ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ হন।
October 8, 2023