ঢাকার বুকে একটি পুরাতন ফ্ল্যাট বিক্রি করা খুব কঠিন এবং ক্লান্তিকর কাজ হতে পারে। যদিও আপনি আশেপাশে প্রচুর ক্রেতা পাবেন কিন্তু এত সব মানুষের ভীড়ে প্রকৃত ক্রেতা খুঁজে বের সত্যিই কঠিন কাজ। তাই এই বিপুল সংখ্যক সম্ভাব্য ক্রেতার মধ্যে প্রকৃত ক্রেতা খুঁজতে আমাদের কিছুটা কৌশলী হতে হবে।
এখানে আমরা কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনার পুরাতন ফ্ল্যাটটি স্বল্প সময়ে সবচেয়ে ভালো দামে, সেরা ডিলে বিক্রি করতে সাহায্য করবে।
Contents
পুরনো ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য সবার আগে যে কাজটি করা প্রয়োজন তা হল রিনোভেট করা বা প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজটি সেরে নেয়া। আপনার হয়ত মনে হতে পারে যে, ফ্ল্যাটটি যেহেতু আমি বিক্রি করেই ফেলব সেহেতু এর পেছনে আর অর্থ ব্যয় করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
কিন্তু ভালো দাম পেতে হলে অবশ্যই অন্তত খুব সাধারন কিছু মেরামতের প্রয়োজন। কেননা কোন ক্রেতাই ত্রুটিপুর্ন কিছু কিনতে চায় না। এছাড়াও ক্রেতারা ত্রুটিপূর্ন বা সমস্যা যুক্ত ফ্ল্যাট কেনার সময় দাম কমানো নিয়ে বা সঠিক দামের চেয়ে কমে কেনার জন্য দর কষাকষি বেশি করে।
এই কারনে আপনার পুরাতন ফ্ল্যাটটি ভালোভাবে ঘুরে দেখুন, এবং কোথায় কোথায় উল্লেখযোগ্য সমস্যা আছে তার তালিকা করুন। এরপর প্রয়োজন অনুসারে একে একে তা সারিয়ে নিন।
আপনার ফ্ল্যাটটি আকর্ষনীয় দেখানোর জন্য একে সজ্জিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ। ক্রেতারা যখন আপনার ফ্ল্যাটটি কেনার আগে দেখবে তখন একেবারে সেটা তাৎক্ষনিক ব্যবহারের উপযোগী মনে হওয়া উচিত। কেননা এলোমেলো বা বিশৃংখল বাড়ি কেউই পছন্দ করবে না।
তাই যতটা সম্ভব ফ্ল্যাট থেকে আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস ও আসবাব সরিয়ে ফেলুন। একেবারে খালি থাকলে সেটার ইন্টেরিওর ডিজাইনে কোন সমস্যা থাকলে সারিয়ে নিন। আর সম্ভব হলে আকর্ষনীয় দেখানোর জন্য হালকা পাতলা ইন্টেরিওর ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন।
আর আসবাবপত্র থাকলে ক্রেতা দেখতে আসার আগেই ফ্ল্যাটটি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখুন। আপনি চায়লে কিছু সবুজ গাছপালা ও গৃহসজ্জার সামগ্রীও ব্যবহার করতে পারেন ফ্ল্যাটটি সাজানোর জন্য।
পুরনো ও ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের দেয়ালের রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। আর ময়লা ও রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়া দেয়াল আপনার ফ্ল্যাটের সৌন্দর্য ম্লান করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
তাই ফ্ল্যাটটি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিলে আপনার উচিত সংস্কার কাজের সাথে সাথে পুরো ফ্ল্যাটটি মানানসই রঙ করিয়ে নেয়া। নতুন উজ্জ্বল ঝলমলে রঙ্গে পুরনো ফ্ল্যাটিটও অনেকটা নতুন দেখাবে এবং সহজেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হবে।
আজকাল অনলাইনে বিজ্ঞাপন সম্ভাব্য ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করার অন্যতম সহজ ও সেরা উপায়। এছাড়াও খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশী বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পন্যের প্রচার করা যায়। একইভাবে নতুন ও পুরনো ফ্ল্যাট কেনাবেচার অনেক সাইট রয়েছে যেখানে ছবি আপলোড করে অনেক ক্রেতার সামনে উপস্থাপন করা যায়।
কিন্তু বিজ্ঞাপনকে ফলপ্রশু করার জন্য আপনার কিছু বিশেষ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরী। যেমন আপনার সজ্জিত ফ্ল্যাটের ছবিগুলো কোন পেশাদার ফটোগ্রাফারের দ্বারা তোলা এবং ব্যতিক্রমী হতে হবে। ছবিগুলো এমন হতে হবে যেন ফ্ল্যাটের সম্পুর্ন চিত্র ফুটে উঠে। ক্রেতা যেন ছবিগুলো দেখেই আপনার ফ্ল্যাট সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা নিতে পারে।
ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার সময় ক্রেতারা সবার আগে যে বিষয়টি দেখে তা হল আলো বাতাস পর্যাপ্ত আসে কিনা। তাই ক্রেতাদের ফ্ল্যাটটি দিনের আলোয় দেখানো সবচেয়ে ভালো। কারণ দিনের বেলা প্রচুর আলো থাকে তাই ক্রেতা সহজেই আকর্ষিত হয়। পর্যাপ্ত দিনের আলো মানেই উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত বাড়ী যা সকলেরই প্রথম পছন্দ।
তবে কোন কারনে দিনের আলোতে বাড়ি দেখানো সম্ভব না হলে পর্যাপ্ত উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রচুর আলো একটি বাড়িতে নান্দনিকতার ছোঁয়া দেয় যা একে ক্রেতাদের কাছে আরো পছন্দের করে তোলে।
গন্ধ মানেই যে কারো জন্যই বেশ বড় একটি ‘না’। কখনও কখনও পুরনো বা ব্যবহৃত ফ্ল্যাটে একটি নির্দিষ্ট গন্ধ থাকতে পারে যা ক্রেতাদের দূরে সরিয়ে দেয়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পয়োঃনিস্কাসন ব্যবস্থা ও পানির লাইন চেক করিয়ে নিতে পারেন।
আর তাৎক্ষনিক সমাধানের জন্য এয়ার ফ্রেশনার, সুগন্ধি মোমবাতি, সুগন্ধি গাছ ফ্ল্যাটে রাখা বেশ কার্যকর হতে পারে। অনেকদিন বাড়ি ব্যবহার করা না হলেও বাড়ির ভেতর এক ধরনের ভ্যাঁপসা গন্ধ তৈরি হতে পারে। তাই বাড়ির দরজা জানালাগুলো খোলা রাখার মাধ্যমেও গন্ধ দূর করা যেতে পারে।
যদিও বিক্রেতার জন্য ফ্ল্যাট বিক্রি করায় প্রধান উদ্দেশ্য তবে এটির দামও খুব সাবধানে নির্ধারন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে পুরাতন ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো বেশী জরুরী। আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত দাম নির্ধারন করে বসেন তাহলে ফ্ল্যাটটি বিক্রি হতে অনেক বেশী সময় লাগতে পারে।
একইসাথে দীর্ঘ সময়ের কারনে হয়ত একটা ভালো দামও আপনার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই আপনার অবশ্যই ফ্ল্যাটের আসল মূল্য বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী মূল্য নির্ধারন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ফ্ল্যাটটির লোকেশন, বয়স, আধুনিকতা, সুযোগসুবিধা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে চলতি বাজার দরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন দাম নির্ধারন করা যেতে পারে।
ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে দেয়াল দেখার পর মনে হয় না একজন ক্রেতাও ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে নূন্যতম আগ্রহ দেখাবে। তাই ফ্ল্যাটের সমস্ত দেয়াল ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পুরাতন বাড়ির ক্ষেত্রে এই সমস্যা খুবই সাধারন।
আপনার ফ্ল্যাটেও যদি এমন কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ক্রেতাকে দেখানোর আগেই এই সমস্যা দূর করা জরুরী। একেবারে সমাধান করতে পারলে ভালো আর না পারলেও যেন অপেক্ষাকৃত শুকনো দেখায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
আসুন এবার একটু বাস্তবতার সাথে মুখোমুখি হই। আপনি যত বেশীই চেষ্টা করুন না কেন, একজন পেশাদার রিয়েল এস্টেট এজেন্টের কাছে আমাদের চেয়ে অনেক বেশী তথ্য থেকে। এমনকি তারা সঠিক ক্রেতার খুঁজে বের করা ও সেরা ডিল তৈরির ক্ষেত্রেও অনেক বেশি দক্ষ।
তাদের পুরো রিয়েল এস্টেট বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে এবং একইসাথে একজন ভালো এজেন্ট আপনার ফ্ল্যাটটির সঠিকভাবে প্রচার করতে সাহায্য করতে পারে।
ফ্ল্যাট পছন্দ হলে ক্রেতা ফ্ল্যাটের দলিল ও কাগজাদি দেখতে চায়বে। কাগজে কোন সমস্যা থাকলে আপনার ফ্ল্যাটটি যত সুন্দর আর লাভজনকই হোক না কেন কেউ কিনতে চায়বে না।
তাই ফ্ল্যাট বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিলে আগেই দলিল নিরীক্ষা করে দেখুন। প্রয়োজনে ভালো কোন প্রোপার্টি এজেন্ট বা উকিলের সাথে পরামর্শ করুন এবং দলিল ও কাগজাদি নিষ্কন্টক রাখুন।
ফ্ল্যাটের বাথরুম ও রান্নাঘরের মেরামতের কাজটি ভালোভাবে করতে ভুলবেন না। যে কোন বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ হল রান্নাঘর ও বাথরুম। তাই ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের এই দুটি অংশতে আগে সমস্যা চোখে পরে। তাই দক্ষ মিস্ত্রি লাগিয়ে এই দুটি অংশের মেরামতের কাজ ভালোভাবে করুন।
প্রয়োজনে নতুন ফিটিংস লাগান। ঢাকায় একটি নতুন ফ্ল্যাটের চেয়ে পুরনো ফ্ল্যাট বিক্রি করা কিছুটা কঠিন হতে পারে। তবে আশাকরি উপরে আলোচিত টিপ্সগুলো আপনার পুরনো ফ্ল্যাটটি দ্রুত বিক্রি করতে ও ভালো মুনাফা পেতে সাহায্য করবে।
January 25, 2024