আসসালামু আলাইকুম, ঘর সাজাতে আমরা কে না ভালোবাসি? আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের ঘরের ইনডোর সুন্দর, ঝকঝকে ও গোছানো হোক। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের ঘরের মধ্যকার আসবাবপত্র, দেয়াল, ফ্লোর ইত্যাদি নোংরা হচ্ছে।
বাড়ি-ঘর সাজাতে এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু আমরা অনেকেই এগুলো পরিষ্কার করার সঠিক নিয়ম জানি না। আমাদের অজ্ঞতার কারণে অনেকসময় আমাদের মূল্যবান সামগ্রী, ঘরের মেঝে, দেয়াল ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এজন্য আজ আমরা জানাবো, কাঠ, গ্লাস ও টাইলসের মতো সারফেস থেকে দাগ উঠানোর কার্যকরী টিপস যাতে খুব অল্প সময়ে এবং সহজেই আপনি আপনার বাড়ির ভিতর দিকটা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারেন।
আধুনিক বিলাসিতার আরেক নাম গ্রানাইট, যেটা এখন প্রায় মানুষের ঘরেই থাকে। বহুল ব্যবহৃত হলেও আমরা অনেকেই জানি না কীভাবে এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের সঠিক উপায় না জানার ফলে এটি অল্পদিনেই এর চাকচিক্য হারায়।
গ্রানাইট পরিষ্কার করতে প্রথমেই ডিশ ওয়াশিং লিক্যুইড গ্রানাইট সারফেসে স্প্রে করতে হবে। তারপর এক টুকরো নরম সুতি কাপড় দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
তবে এক্ষেত্রে মনে রাখবেন যেন কোনোভাবেই আ্যমেনিয়াযুক্ত কঠিন কিছু, ভিনেগার, ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করা না হয়। এগুলো গ্রানাইটের সারফেসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আধুনিক সব ফ্ল্যাটে এখন মার্বেল টাইলস ইউজ করা হচ্ছে। মার্বেল হচ্ছে সুক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত টাইলস যার পরিচর্যা কাজে একটু হেরফের হলেই বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমাদের একটু সাবধান হতে হবে।
তবে মার্বেল পরিষ্কার করতে আমাদেরকে কোনো প্রফেশনাল ক্লিনারও লাগবে না। আমরা খুব সহজে নিজেরাই পরিষ্কার করে ফেলতে পারি।
মার্বেল পরিষ্কার করতে প্রথমে এক বালতি গরম পানির মধ্যে ২-৩ চামচ বেকিং সোডা এবং পিএইচ নিরপেক্ষ বাজারের সাধারণ ডিটারজেন্ট অথবা ডিশ ওয়াশিং লিকুইড মিশিয়ে নিন। এরপর এটিতে একটি স্পঞ্জ ডুবিয়ে আস্তে আস্তে ঘষে নিন।
স্পঞ্জটি বারবার পানির মধ্যে ডুবিয়ে নিবেন। তবে, যখন পানির রঙ বাদামি হবে তখন ওই পানি পরিবর্তন করে নিন। প্রয়োজনে এই হোম রিমেডি পুনরায় বানিয়ে নিন। ভালোভাবে পরিষ্কার করার পরে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
মনে রাখবেন, মার্বেল পরিষ্কার করতে কোনো এসিটিক বেইজড ক্যেমিকেল যেমন ভিনেগার, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ব্লিচ ইত্যাদি ইউজ করবেন না, এতে মার্বেলের ক্ষতি হতে পারে। এখন বাজারে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই নানারকম কোম্পানির মার্বেল ক্লিনার পাওয়া যায়। আপনি চাইলে ভালোমানের একটি ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন।
বর্তমানে সবার ঘরে ঘরে গ্লাস রয়েছে। এই গ্লাস পরিষ্কার করার সঠিক নিয়ম আমরা অনেকেই জানি না। অনেক সময় গ্লাস পরিষ্কার করতে যেয়ে দেখি ছোপ ছোপ দাগ থেকে যায় গ্লাসের উপর।
তাই তো, গ্লাস পরিষ্কারের কার্যকরী টিপস হিসেবে এক কাপ গরম পানির মধ্যে এক চা চামচ হোয়াইট ভিনেগার মিশিয়ে বোতলে ভরে গ্লাসের ওপর স্প্রে করে শুকনো কাপড় দিয়ে ঘষে ঘষে মুছে ফেলতে হবে। কঠিন দাগের জন্য ভিনেগারের সাথে সামান্য টুথপেস্ট যোগ করতে পারেন।
মনে রাখবেন, শক্ত কোনো স্পঞ্জ বা সুতি কাপড় বাদে অন্য কোনো কাপড় ইউজ করবেন না। এতে গ্লাসে স্ক্র্যাচ পড়ে যেতে পারে।
আধুনিক সব বাড়িতে এখন টাইলস একটি কমন ব্যাপার। এজন্য টাইলস পরিষ্কারের নিয়ম জানাটাও দরকার। টাইল পরিষ্কারের কার্যকরী উপায় হিসেবে আপনি প্রতিদিন পানির সাথে ডিশ ওয়াশিং তরল সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
পাশাপাশি, এক লিটার গরম পানির মধ্যে একটি পাতিলেবুর রস মিশিয়ে টাইলস মুছে ফেলতে পারেন। এতে কঠিন দাগও উঠে যাবে, সাথে ঘরের মধ্যে একটি সুন্দর স্মেল পাওয়া যাবে।
এছাড়া, টাইলসের ফাঁকে ফাঁকে ময়লা জমে দাগ হতে পারে। এ দাগ উঠাতে একটি নরম ব্রাশের সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে নরম ব্রাশ এবং কাপড় ব্যবহার করবেন। নইতো, শক্ত কিছু ব্যবহার করলে স্ক্র্যাচ পড়ে যাবে।
মনে রাখবেন, ক্যেমিকেল যুক্ত কোনো তরল ব্যবহার না করাই উত্তম। অন্যথায় টাইলস বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।
পেইন্ট পরিষ্কার রাখতে আমাদের একটু সতর্ক হতে হবে কারণ পেইন্টের ভিন্নতার কারণে পরিষ্কারের ধরণও ভিন্ন হতে পারে। যেমন ওয়েল বেইজড পেইন্টে পানি ব্যবহারে বিশেষ নজর দিতে হবে।
পেইন্ট পরিষ্কারের একটি সহজ ও কমন উপায় হলো পানির সাথে ডিশওয়াশিং তরল ইউজ করে মুছা। প্রয়োজনে ভিনেগার, লেবুর রস কিংবা বেকিং সোডাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফার্ণিচার বা আসবাবপত্রের কথা শুনলে সর্বপ্রথম মাথায় আসে কাঠ। এখন সবার ঘর কাঠের জানালা, দরজা, আসবাবপত্রে সাজানো। এসব আসবাবপত্র ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। কিন্তু যদি এই আসবাবপত্র-ই নোংরা থাকে তাহলে ঘরের সৌন্দর্যহানি সহ জিনিসপত্রের ক্ষতিও হতে পারে। এজন্য কাঠ পরিষ্কারের কয়েকটি কার্যকরী টিপস জেনে নেওয়া ভালো। যেমন-
মনে রাখবেন, কাঠে পানি ব্যবহার করা যাবে না। এতে কাঠের বার্নিশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চাইলে পানির পরিবর্তে উড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
সম্পদ যেহেতু আমাদের, রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বও আমাদের। তাই গ্লাস, কাঠ এবং টাইলসের সারফেস পরিষ্কারের কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। তবে, স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে একটা কথা আছে “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।”
এজন্য, কাঠ, গ্লাস এবং টাইলসের ওপর ময়লা জমতে দেওয়াটাই উচিত নয়। সাথে সাথে নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। কারণ দীর্ঘদিন ময়লা পড়ে পড়ে কঠিন দাগ হয়, যেটা পরবর্তীতে আমাদের ভোগান্তিতে ফেলে। প্রতিদিনের নোংরা প্রতিদিন পরিষ্কার করা উচিত।
আশা করছি টাইলস সহ আসবাবপত্রের নোংরা পরিষ্কারের কিছু ঘরোয়া টিপস নিয়ে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের উপকারে আসবে।
April 20, 2024