গ্রামে ও শহরে ইতোমধ্যে শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। শীত আসার সাথে সাথে আমাদের ঘর ও ব্যবহার্য্য পানি গরম রাখার প্রয়োজনীয়তা বাড়ে এবং এই কাজটিতে সবচেয়ে কার্যকরী দুটি জিনিস হলো রুম হিটার ও গিজার। তবে সঠিকভাবে হিটার বা গিজার ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এগুলো কার্যকারিতা হারাতে পারে এবং দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে।
তাই শীতের মৌসুমে গিজারের সঠিক ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কিছু কার্যকরী টিপস জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ব্লগে শীতকালে ঘর গরম রাখার ১০টি কার্যকরী টিপস ও গিজার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে নেব।
শীতের আগমন ও তাপমাত্রার প্রভাব
শীতের হাওয়া বইতে শুরু করলে তাপমাত্রা কমে যাওয়া, বাতাসে আর্দ্রতা করে যাওয়া সহ নানান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সময় নিম্ন তাপমাত্রার কারণে পানি ঠান্ডা হয়ে যায়, যা দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন গোসল করা, বাসন মাজা এবং কাপড় ধোয়ার মতো কাজে অসুবিধার সৃষ্টি করে। গিজার ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সহজেই পানি গরম করতে পারি এবং ঠাণ্ডা তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে চলতে পারি।
যেহেতু শীতে তাপমাত্রা নিম্নমুখী হওয়ায় গিজার প্রায় সময়ই ব্যবহার হয়, যা এর কার্যকারিতা ও স্থায়িত্বে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গিজারের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি।
গিজার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম ও কিছু টিপস
- বিভিন্ন তাপমাত্রায় ব্যবহার করুনঃ গিজার সব সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় চালানোর প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজন অনুসারে তাপমাত্রা পরিবর্তন করুন, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। যখন যে পরিমাণ তাপমাত্রায় রাখা প্রয়োজন তখন সে তাপমাত্রায় রাখুন।
- চালু-বন্ধের নিয়ম মেনে চলুন: গিজার ব্যবহারের পর অবশ্যই তা বন্ধ করে রাখুন এবং দীর্ঘ সময় চালু রেখে দেবেন না। বিশেষত রাতে ব্যবহার শেষে গিজার বন্ধ করে রাখতে ভুলবেন না।
- ছিদ্র পরীক্ষা করুন: গিজারে পানি লিক করছে কিনা বা কোনো ছিদ্র হয়েছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। ছিদ্র বা লিক থাকলে তা দ্রুত ঠিক করুন, যাতে বিদ্যুৎ অপচয় না হয় ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।
- নিয়মিত পরিষ্কার করুন: দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে গিজারের ভিতরের অংশে ক্যালসিয়ামের আস্তর জমতে পারে, যা কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর নিয়মিত গিজারের ভিতরের অংশ পরিষ্কার করুন।
- বারবার অন-অফ করবেন নাঃ গিজার বারবার চালু ও বন্ধ করবেন না। একবার চালু করলে পানি পুরোপুরি গরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, তারপর প্রয়োজন শেষ হলে বন্ধ করুন।
আপনার বাসার জন্য কোন ধরনের গিজার কিনবেন সে বিষয়ে আমাদের একটি বিশেষ আর্টিকেল আছে। বাসার জন্য বেস্ট গিজার সম্পর্কে জানতে সেটি পড়ুন।
ঘর গরম রাখার ১০ কার্যকরী উপায় (টিপস)
দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার কারণে আমাদের দেশে গ্রীষ্মের মৌসুমে অসহনীয় গরম এবং শীতকালে অসহ্য ঠান্ডা তাপমাত্রা থাকে। কখনো কখনো তাপমাত্রা এতটায় কমে যায় যে, ঘরের মধ্যেও মোটা কাপড় পরে থাকতে হয়।
এজন্য শীতকালে ঘর গরম রাখার প্রয়োজন হয়। নিচের অংশে শীতকালে ঘর গরম রাখার ১০ কার্যকরী উপায় সম্পর্কে বলা হলো।
- সঠিক রুম হিটার ব্যবহার করুনঃ গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে আমরা ঘর ঠান্ডা রাখতে যেমন এসি ব্যবহার করি তেমনি শীতকালের প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে রুম হিটার ব্যবহার করতে পারি। বাজারে দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাইজ, কোয়ালিটি অনুযায়ী কয়েক হাজার টাকার দামের রুম হিটার পাওয়া যায়। শীতের সময় ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এগুলো খুবই কার্যকরী।
- পর্দার ব্যবহার করুনঃ ভারি ও মোটা পর্দা ব্যবহারের মাধ্যমে বাইরের ঠান্ডা হাওয়া ঘরে প্রবেশ রোধ করা যায়। সেজন্য শীতকালে ঘর গরম রাখতে পর্দা ব্যবহার করুন এবং ঘরের দরজা ও জানালার ফাঁকা অংশগুলো বন্ধ রাখুন, যাতে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকতে না পারে এবং তাপমাত্রা বজায় থাকে।
- মাদুর বা কার্পেট ব্যবহার করুন: এখন আমাদের বেশিরভাগ বাসা-বাড়ির মেঝেতে টাইলস ব্যবহার করা হয়। শীতকালে টাইলসগুলো ঠান্ডা তাপমাত্রা ধরে রাখে এবং ঘরে এক ধরনের ঠান্ডা পরিবেশ তৈরি করে। মেঝের ঠাণ্ডা রোধ করার জন্য মোটা মাদুর বা কার্পেট বিছিয়ে দিন, যা ঘরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
- কাচের জানালা ব্যবহার করুনঃ কাচের জানালা ব্যবহার করলে বাইরে থেকে কতটুকু বাতাস ঘরের মধ্যে প্রবেশ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শীতকালে ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকে, সেই সাথে সূর্যের মৃদু উষ্ণ তাপমাত্রাও থাকে। কাচের জানালা ব্যবহার করলে ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করবে এবং বাইরের ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ প্রতিরোধ করবে, যা ঘরকে উষ্ণ রাখবে।
- রান্নার সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন: রান্নার সময় কিচেনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ সময় ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ রেখে এই গরম তাপমাত্রা বাসার অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে দিলে তা সমগ্র ঘরকে গরম রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অনেকের সাফোকেশনের মতো সমস্যা হতে পারে।
- ফিলামেন্ট বাল্ব ব্যবহারঃ বর্তমানে এলইডি বাল্বের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়। এর মূল কারণ এটি কম তাপমাত্রা উৎপন্ন করে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। তবে ঘরের ভেতরকার পরিবেশ গরম রাখতে এলইডি বাতির পরিবর্তে ফিলামেন্ট বাল্ব ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, এতে অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়।
- বাবল র্যাপের ব্যবহারঃ বাবল র্যাপ যে শুধু প্যাকেজিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়, তা নয়। ঘরের মধ্যকার উষ্ণ তাপমাত্রা বাইরে যাওয়া রোধ করতে জানালায় বাবল র্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী।
- পর্যাপ্ত আসবাবপত্র রাখাঃ যে ঘরে যত বেশি আসবাবপত্র থাকে সে ঘরে তাপমাত্র তত বেশি থাকে। কারণ আসবাবপত্রগুলো তাপমাত্রা ধরে রাখতে সহায়তা করে। এজন্য আপনার শোবার ঘরে পর্যাপ্ত আসবাবপত্র রাখতে পারেন।
- ফায়ারপ্লেস ব্যবহার করুনঃ আমাদের দেশে শহরে এটির তেমন ব্যবহার লক্ষ্য করা না গেলেও গ্রামে বা বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। শোবার ঘরে ফায়ারপ্লেস বা একটি উপযুক্ত পাত্রে কয়লা জ্বালিয়ে রেখে ঘরকে গরম রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, এটি যেন নিরাপদ স্থানে স্থাপন করা হয়।
- ফয়েল পেপার ব্যবহার করুনঃ অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার তাপ পরিবাহক হিসেবে দারুণ কাজ করে। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরের উষ্ণ তাপমাত্রা বাইরে যাওয়া থেকে বাধা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে রান্না ঘরের দেয়ালে ও জানালায় ফয়েল পেপার ব্যবহার করলে এটি রান্নাঘরের গরম হাওয়া বাইরে যেতে বাধা দেবে এবং বাসার অন্যান্য অংশও উষ্ণ রাখবে।
সারাংশ
শীতকালে ঘরের মধ্যকার শীতল অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা উপরোক্ত কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারি। এগুলো সবই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। যদিও কৌশলগুলোর বেশিরভাগই প্রাচীন তবে খুবই কার্যকরী।
শীতকালে ঘর গরম রাখার উপায়গুলোর পাশাপাশি গিজার ব্যবহারের যে নিয়ম শেয়ার করেছি, আশা করছি, সেগুলো আপনার কাজে আসবে।
November 13, 2024