শর্ট সার্কিট হলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি বরাবরই থেকে যায়। শর্ট সার্কিটের কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে যেমন, বিস্ফোরণ, আগুন লাগা, সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি, বৈদ্যুতিক শক, জখম এমনকি মানুষ মারাও যেতে পারে। আর এ থেকেই বোঝা যায় যে শর্ট সার্কিট কতটা ক্ষতিকর আমাদের জন্য।
শর্ট সার্কিটের কারণে বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগা এবং মারাত্মক ক্ষতির কথা আপনি ইতিমধ্যেই শুনে থাকবেন হয়তো। তবে শর্ট সার্কিট কি, কেন শর্ট সার্কিট হয়, শর্ট সার্কিট হলে কি কি ক্ষতি হতে পারে, শর্ট সার্কিট হলে করনীয় এবং সর্বোপরি শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায়গুলো কী এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে থাকছে আমাদের আজকের লেখা।
Contents
বৈদ্যুতিক সিস্টেমে এমন কোন ফল্ট যার কারেন্ট লোডের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আগে বা পরে এক বা একাধিক ফেজ নিউট্রল একত্রে সংযোগের ফলে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে অত্যন্ত বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হয় ঐ কারেন্টকে শর্ট সার্কিট কারেন্ট বলা হয়।
আরও সহজ ভাষায় বৈদ্যুতিক সার্কিটের সমস্যা বা গোলযোগ কে শর্ট সার্কিট বলা হয়ে থাকে।
শর্ট সার্কিট বিভিন্ন কারণে হতে পারে। পানি, তরল পদার্থ বা অন্য কোনো ধাতুর কারণেও শর্ট সার্কিট হতে পারে। এছাড়াও তারের সংযোগ স্থানে বিচ্ছেদের কারণেও হতে পারে।
এই শর্ট সার্কিট হওয়ার ফলে ভেতরে প্রচণ্ড তাপ সৃষ্টি হয় এবং এক সময় বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আর এই অমানবিক ঘটনা থেকেই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য হলো শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায়গুলো কি সেটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা। তবে তার আগে কি কি কারণে শর্ট সার্কিট হয় সেটি জানা প্রয়োজন। এতক্ষণ আমরা শর্ট সার্কিট কি এবং কেন শর্ট সার্কিট হয় সে সম্পর্কে জানলাম। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক যে, কি কি কারণে শর্ট সার্কিট হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ ত্রুটি : একটি তার যখন অন্য একটি তারের সংস্পর্শে আসে ঠিক তখন যেনো কোনো কারণে শর্ট সার্কিট না হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি), পলিথিন (পিই) অথবা নাইলনের মতো কিছু ম্যাটারিয়াল ব্যবহার করা হয়। তবে এগুলোর কারণে কোনো ত্রুটি থাকলে শর্ট সার্কিট হয়। যাকে অভ্যন্তরীণ ত্রুটি বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
নড়বড়ে সংযোগ : নড়বড়ে সংযোগ বলতে বোঝায় বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ স্থানে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে সেটিকে নড়বড়ে সংযোগ বলা হয়ে থাকে। নড়বড়ে সংযোগ থাকলে নিউট্রল এবং লাইভ তার কোনোভাবে সংস্পর্শে চলে আসলে শর্ট সার্কিটের মতো দূর্ঘটনা ঘটে।
ত্রুটিযুক্ত অ্যাপ্লায়েন্স : বিভিন্ন সময়ে ত্রুটিযুক্ত অ্যাপ্লায়েন্সের কারণে শর্ট সার্কিট হয়। তাই অবশ্যই ত্রুটিযুক্ত অ্যাপ্লায়েন্স এড়িয়ে ত্রুটিমুক্ত অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করা উচিৎ।
শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায়গুলো কী?
শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায়গুলো কি -তা জানা থাকলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের প্রভাবে ঘটে যাওয়া অঘটন থেকে বেচে যেতে পারে আপনার প্রাণ অথবা ক্ষয়ক্ষতির থেকে রক্ষা পেতে পারেন সহজেই। তাহলে চলুন এবার জেনে নেই শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায়গুলো সম্পর্কে।
শর্ট সার্কিট প্রতিরোধে অবলম্বন করা যেতে পারে বিভিন্ন কৌশল এবং প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা। মূলত কি কি প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন সেটি তুলে ধরতে যাচ্ছি এই ব্লগের মাধ্যমে। চলুন শুরু করা যাক।
শর্ট সার্কিট প্রতিরোধে অবশ্যই উন্নত মানের কেবল ও ভালো কোম্পানির তৈরি সার্টিফাইড বিদ্যুৎ প্রবাহিত তার ব্যবহার করা উচিৎ। কেননা মজবুত এবং উন্নত মানের কেবল ব্যবহারের ফলে শর্ট সার্কিটের মতো দূর্ঘটনা থেকে অনেকখানি রেহাই পাওয়া যায় এবং শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি অনেকখানি কম থাকে।
শর্ট সার্কিট প্রতিরোধে অবশ্যই জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে বাড়ি তৈরি করতে হবে। জাতীয় বিল্ডিং কোড বলতে বোঝায়, আপনি বাড়ির দেওয়ালের ভিতরের বা বাইরের যে অংশ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করতে চান। সেটি হতে হবে জাতীয় বিল্ডিং কোড এর মাপ অনুযায়ী।
পাওয়ার অথবা মাল্টি-প্লাগ ব্যবহারে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। অনেকসময় আমরা একটি ইলেক্ট্রিক্যাল আউট-লেটে একের অধিক মাল্টি-প্লাগ ব্যবহার করি। কিন্তু, একের অধিক মাল্টি-প্লাগ ব্যবহারের ফলে ওভারলোডের ফলে অনেকসময় শর্ট সার্কিটের মতো দূর্ঘটনা যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে। তাই এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
অনেক সময় অতিরিক্ত তাপের কারণে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটে। এছাড়া পানির কারণেও শর্ট সার্কিট হতে পারে। তাই অবশ্যই রান্নাঘর, ফ্লোর, ওয়াশিং মেশিন, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি থেকে ইলেকট্রিক লাইন গুলো কে দূরে রাখতে হবে। এমন ভাবে বোর্ড অথবা অন্যান্য কানেকশন গুলো ব্যবহার করতে হবে যেনো তাপ অথবা পানি কোনো ভাবেই বৈদ্যুতিক লাইন স্পর্শ করতে না পারে। নতুবা শর্ট সার্কিট হতে পারে। তাই অবশ্যই এ ব্যাপারে আমাদের কে সাবধান থাকতে হবে।
শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের জন্য রুটিন মাফিক ইলেক্ট্রিক্যাল লাইন গুলো ভালোভাবে চেকাপ করতে হবে। কোথাও কোনো প্রকার ত্রুটি রয়েছে কিনা, ত্রুটি থাকলে যথা সময়ের মধ্যেই সেটি সমাধান করতে হবে। নতুবা এমন ছোট ছোট ভুল থেকেই ঘটে যেতে পারে অমানবিক দূর্ঘটনা।
অন্তত প্রতি ছ’মাস অন্তর অন্তর বা বছরে অন্তত একবার ইলেক্ট্রিক্যাল তার ও সংযোগ স্থান গুলো চেকাপ করা প্রয়োজন। এতে করে কোনো প্রকারের ত্রুটি থাকলে সেটি সহজেই সমাধান করা সম্ভব হবে।
কোনো স্থানে পুড়ে যাওয়া বা গরম হয়ে যাওয়ার দুর্গন্ধ রয়েছে কিনা এসব বিষয় ভালোভাবে চেকাপ করতে হবে। এছাড়াও তারের মাঝে কোনো প্রকার লিক রয়েছে কিনা ভা সংযোগ স্থলে কোনো প্রকার বিভেদ রয়েছে কিনা। ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালোভাবে চেকাপ করে নিতে হবে। তাহলে সহজেই শর্ট সার্কিটের মতো সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
প্রতিবছর আমাদের কিছু অসাবধানতার কারণে শর্ট সার্কিটের মতো অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে। আর এর ফলে আমরা বিভিন্ন ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকি এবং আমাদের প্রাণহানির আশংকা ও থেকে যায়।
আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সামনে শর্ট সার্কিট প্রতিরোধের উপায়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই ব্লগটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা সতর্ক হবেন এবং দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন।
আমরা আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে বাড়ি, ঘর সম্পর্কে বিভিন্ন টিপস নিয়মিত পাবলিশ করে যাচ্ছি। আমরা আশা রাখি আপনারা আমাদের এই ব্লগটি পছন্দ করবেন। একইসাথে আমাদের এই লেখাটি পৌঁছে দিবেন আপনার সজনদের কাছে।
January 12, 2023