বর্তমান সময়ে ফ্লাট একটি জনপ্রিয় শব্দ, শব্দটির ব্যবহারের সময়ে মানুষ উৎসুক হয়ে তাকায় বক্তার দিকে। এই সময়ে জমি কিনে বাড়ি করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার তার উপর রাজধানীতে তা আরো কষ্টকর। ফ্লাটের দিকে ঝুঁকার অনেক কারণ রয়েছে তন্মধ্যে আকাশচুম্বী জমির মূল্য ও একটি কারণ।
আর সেজন্য সিংহভাগ মানুষ ফ্লাট কেনার দিকে ঝুঁকেছে। অল্প খরচে নাগরিক সুবিধা পাওয়ার এটি একটি উৎকৃষ্ট পথ হিসেবে ধরা হয়। আর ঠিক এই সময়ে ডেভেলপার কোম্পানি গুলো অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করে ফ্লাট ভাড়া এবং বিক্রি করছে।
রাজধানীতে স্থায়ীভাবে থাকার লক্ষ্যে মানুষ ডেভেলপ কোম্পানির সেসব ফ্লাটের দিকে অধিক পরিমাণে ঝুঁকে পড়ছে।
কিন্তু তারপর ও মানুষ প্রতারিত হয় অনেক সমস্যায় জর্জরিত হয় ফ্লাট কিনতে গিয়ে। তাই ফ্লাট কেনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া উচিত এবং কেনার ক্ষেত্রে নিয়ম কানুন গুলো মেনে চলতে হবে। যা করণীয় দরকার তা করতে হবে এবং বর্জনীয় বিষয়াদি বর্জন করতে হবে।
Contents
প্রথমেই মানুষকে তাদের নিজের পছন্দের যায়গা বা স্থান নির্বাচন করতে হবে। কেমন যায়গা তারা পছন্দ করে, কেমন পরিস্থিতিতে সে থাকতে কম্ফোর্টেবল ফিল করবে সে অনুযায়ী যায়গা নির্বাচন করা আবশ্যক। আর তারপর সে যায়গার যাতায়াত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা কতটা উন্নত তা যাচাই করতে হবে।
সে যায়গা থেকে অফিস বা কর্মক্ষেত্র কতটা দূরে বা কাছে তা দেখতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা, নাগরিক সুবিধা সম্পর্কে জানা দরকার আর হাসপাতাল, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার সহ উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর সহজলভ্যতার এবং সুবিধা অসুবিধার ব্যাপারে জানা অত্যন্ত জরুরি।
যে যায়গায় ফ্লাট কেনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে সে যায়গার নিরাপত্তা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে।
প্রাকৃতিক পরিবেশসহ গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা জনিত দিক গুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কেননা নিরাপত্তাহীনতায় থাকার চেয়ে নিরাপত্তার সাথে স্বস্তিতে থাকা আনন্দের এবং সুখের।
প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে মালিকের সত্যবাদিতা এবং ভালো মানুষির প্রতি। যাতে করে জীবনভর একজন ভালো মানুষের সাথে থাকা সুখকর ব্যাপার হয়।
যদি খারাপ মালিকের আওতায় পড়েন তবেতো জীবন গেলো! একজন ভালো, নম্র ভদ্র মালিকের থেকে ফ্লাট কেনা সহজ হয়ে থাকে।
পরিবারের সদস্য অনুযায়ী ফ্লাটের আয়তন নির্বাচন করতে হবে। পরবর্তিতে আসে আসবাব পত্র ও রুচি জনিত প্রশ্ন। বিল্ডিং এর কোন পাশে ফ্লাট নিলে আপনার কেমন সুবিধা হবে সেটা আপনার রুচির উপর নির্ভর তাই পছন্দ সম্পর্কে অবগত হোন। এরপর আসে তলা সম্পর্কে আলোচনা।
কত তলায় থাকা আপনার জন্য ঠিক হবে বলে মনে করেন। একদম যে তলায় থাকার ইচ্ছে পোষণ করেন সে তলায় থাকার সুযোগ সুবিধা জেনে নিন।
কারণ একদম নিচ তলার সুবিধা আর অসুবিধার সাথে একদম টপ ফ্লোরে থাকার সুবিধা অসুবিধার সাথে মিল পাওয়া যায়না।
টপ ফ্লোরের অতিরিক্ত গরম জীবন দুর্বিষহ করার পাশাপাশি ছাদবাগান সহ অন্যান্য কিছুতে সুবিধা দিয়ে থাকে।
আজকালকার অ্যাপার্টমেন্ট গুলোতে আধুনিক সুযোগ সুবিধার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আর সেক্ষেত্রে জিমনেশিয়াম, বাচ্চাদের খেলার মাঠ, কমিউনিটি স্পেস, পার্কিং, সুইমিংপুল সহ অনেক অনেক ধরণের সুবিধা বিদ্যমান থাকে।
ভবনের বাইরের আর ভিতরের সকল সুবিধা অসুবিধা নিশ্চিত করে ফ্লাট নির্বাচন করুন। বেশিরভাগ মানুষ দক্ষিণ দিকের ফ্লাট নির্বাচন করলেও স্থান এবং পরিবেশ অনুসারে ফ্লাট নির্বাচন করার অনুরোধ রইলো।
প্রথমেই মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি মালিক সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে হবে। কার কাছ থেকে ফ্লাট নিতে চাচ্ছেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। প্রতিষ্ঠান নাকি মূল মালিকের থেকে ফ্লাট কিনবেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
যে জমিতে ফ্লাট টি রয়েছে সে জমির সর্বশেষ রেকর্ড জানা আবশ্যক কেননা বিক্রেতার নাম উল্লেখ আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
আর এটাও জানা জরুরি যে রিয়েল এস্টেট কোম্পানির নিবন্ধন আছে কিনা এবং রিহ্যাবের সদস্য কিনা সে ব্যাপারে শতভাগ ধারণা থাকতে হবে।
বুকিং মানির ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট হলো ৪০%টাকা দিয়ে এগ্রিমেন্ট রেজিস্ট্রি করে নেওয়া। ফ্লাট ক্রয় কারীর অবশ্যই টি-আইএন থাকতে হবে। ফ্লাট বরাদ্দের শর্তগুলো ভালো ভাবে বুঝে নেওয়া আবশ্যক।
বিক্রেতা জমির প্রকৃত মালিক কিনা যাচাই করতে হবে এবং জমির নামকরণে কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানতে হবে। জমির প্রকৃত মালিক কিনা সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য পেতে হবে। কেননা ফ্লাট কেনার আগে মালিক সম্পর্কে জানা আবশ্যক।
ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের ক্ষেত্রে হালনাগাদ খেয়াল রাখা জরুরি কেননা কর না দেওয়ার কারণে কোন কেস বা মামলা আছে কিনা সে সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি।
ভূমি কোন কারণে পূর্বে কখনো নিলামে উঠছে কিনা সে ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান রাখা আবশ্যক।
প্রস্তাবিত ফ্লাটের নকশার সাথে এবং ফ্লাটের অবস্থার সাথে মিল আছে কিনা তা দেখতে হবে কেননা নকশার সাথে মিল না থাকলে রাজউক বাড়তি যায়গা ভেঙ্গে দেয়।
প্রয়োজনে আশেপাশের মালিকদের থেকে খতিয়ান গ্রহণ করে পূর্ণ তথ্য জেনে নিতে হবে। নকশার সাথে মিল থাকলে তবেই এ পয়েন্টে ফ্লাটকে নির্বাচন করা যেতে পারে।
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউক এর অনুমোদন সম্পর্কে জানতে হবে। প্রায় সময় দেখা যায় যে রাজউক অনুমতি দেয় ৫-৬তলা করার কিন্তু ভবন ৮-১০ তলার হয়ে থাকে।
সেক্ষেত্রে আইন না মানার কারনে পরবর্তিতে রাজউক বাড়তি বা অতিরিক্ত স্থান ভেঙ্গে দেয়।
ফ্লাট নেওয়ার পর বাড়তি ঝামেলা না চাইলে গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
যদিও বর্তমানে নতুন ফ্লাটে গ্যাস সুবিধা দেওয়া হয়না। আর মিটারের স্থায়িত্বের ব্যাপারে সঠিক তথ্য জেনে নিতে হবে। এছাড়া বাকি সুবিধা গুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
প্রস্তাবিত ফ্লাটের সম্পর্কে পূর্ণ জানা আবশ্যক। জমির মাটির পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত, এতে জানা যাবে মাটি কতটা শক্তপোক্ত এবং কতটা ধারণক্ষমতাসম্পন্ন।
বর্তমানে রাজধানীর পুকুর জলাশয় গুলো ময়লা দিয়ে পূর্ণ করে তাতে ফ্লাট তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে আর তাই জমির মাটির পরীক্ষার সঠিক রেজাল্ট প্রয়োজন।
ফ্লাটটি সরকারি খাস জমিতে আছে কিনা, নাকি সরকারের কোন স্বার্থে আছে সেসব বিষয়ে পূর্ণ খবর জানা আবশ্যক। জমি অর্পিত নাকি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় সেসব বিষয় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি যাচাই করতে হবে। যদি বিক্রেতা পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে জমি পেয়ে থাকে তবে এর বৈধতা যাচাই জরুরি হয়ে পড়ে। আর অ্যাটর্নি সঠিক কিনা সে ব্যাপারে ও পূর্ণ জ্ঞান রাখা আবশ্যক।
প্রস্তাবিত ফ্লাট কিস্তির ভিত্তিতে কেনা হলে কত কিস্তিতে এবং কখন স্থানান্তর হবে সে সম্পর্কে চুক্তিতে বিশদ উল্লেখ থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় সব বিষয় যা সম্পর্কে জানা জরুরি :
প্রস্তাবিত ফ্লাটের এলাকার বাজার মূল্য দেখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
পুরনো ফ্লাট কেনার সময় আশেপাশের ফ্লাটের মালিক অথবা অধিবাসী সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখা উচিত।
ফ্লাট পুনরায় বিক্রির ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা গুলো দেখেনিন।
খাজনার কারণে জমি কখনো নিলামে উঠেছে কিনা সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানা আবশ্যক।
ফ্লাট কেনার সময়ে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া করা, যাচাই না করা, আইন – কানুন সম্পর্কে অসচেতনতা, পরামর্শ গ্রহণে অনীহা, সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা।
অন্তিম: আগের কষ্ট ভালো পরের কষ্টের চেয়ে তেমনি আগে কষ্ট করে সব সম্পর্কে যাচাই করে সব কিছু জেনেশুনে ফ্লাট কেনা উচিত। পরের কষ্টের চেয়ে সুখ উত্তম।
December 22, 2021