Contents
বর্তমান সময়ে মানুষের আয়ের উৎস বাড়ছে। বাড়ছে জীবনযাপনের পদ্ধতি ও চাহিদা আর তাই বাড়তি চাহিদায় চাই চাহিদামত থাকার জায়গা। থাকার জায়গার কথা উঠলেই প্রথমেই মনে আসে নিজের একটি জমি, বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট কেনার কথা।
বর্তমানের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিজের একটা বাড়ি কেনা বা ফ্ল্যাট কেনা খুব একটা সহজ কথা নয় সবার জন্য। এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ পুঁজি, সঠিক পরিকল্পনা এবং বিশ্বাসযোগ্য জনবল। অনেকে আবার বাড়ি বা ফ্ল্যাট করার ক্ষেত্রে নির্ভর করে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।
সে ক্ষেত্রে নিজের চাহিদা মত সঠিক বাড়ি, প্লট বা ফ্ল্যাট পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে নিতে হবে সঠিক ব্যবস্থা এবং বিচক্ষণতা সম্পন্ন সিদ্ধান্ত। একটি বাড়ি, ফ্ল্যাট, বা প্লট কেনার সময় সকল বিষয় বিবেচনায় আনতে হয়। সকল বিষয় বিবেচনা করে নিজস্ব পুঁজি খাটিয়ে আমরা ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি তৈরি করে থাকি।
একটি বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট কেনা সত্যিই একটি বিশাল ব্যপার। বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট কেনার মাধ্যমে কেউ নিজস্ব মালিকানায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে তা সত্যিই একটি ভালো বিনিয়োগ। পাশাপাশি থাকবে মানসিক শান্তি যেটা কিনা ভাড়া বাসা কিংবা ভাড়া ফ্ল্যাটে পাওয়া যায় না। তাই ফ্ল্যাট বা জমি ক্রয় ক্ষেত্রটি আসলে একটি সফল এবং লাভজনক বিনিয়োগ।
একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা মানে শুধুমাত্র আবাসন চাহিদার ব্যবস্থা করাই নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি খুঁটিও বটে। বর্তমান সময়ে বাজারের ঊর্ধ্বগতির দিকে যদি লক্ষ্য করি তবে দেখা যায় কাঁচা বাজারের পেঁয়াজ-রসুনের দাম যেরকম দিন দিন বাড়ছে তেমনি ফ্ল্যাট- জমির দামও দিন দিন বাড়ছে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে একটি ফ্ল্যাট বা জমি কেনা হলে পরবর্তী ২০ বছরে যখন সেই জমির দাম দ্বিগুণ কিংবা তিন গুণ হবে তখন তা সঠিক সঞ্চয় ক্ষেত্র বলে বিবেচিত হবে।
এছাড়াও নিজস্ব ফ্ল্যাট বা জমিতে বাড়ি করে তা যদি ভাড়া দেয়া হয় তবে তা থেকে প্রতি মাসে একটি ব্যবহারযোগ্য অর্থ আসে। অতএব দেখা যায় বর্তমানে চলার খরচ এবং ভবিষ্যতের সঞ্চয় দুই-ই সম্ভব হচ্ছে ফ্ল্যাট বা জমি কেনার মাধ্যমে। প্রতি মাসে ব্যাংকে টাকা রেখে সঞ্চয় করা থেকে ফ্ল্যাট ক্রয় কিংবা জমি ক্রয়ের মাধ্যমে সঞ্চয় করা হলে তা সর্বোপরি লাভজনক। তাই সঞ্চয়ের খাত হিসেবে ফ্ল্যাট বা জমি ক্রয় একটি সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে।
জমি কেনার ক্ষেত্রে এককালীন বড় অঙ্কের টাকা এবং আনুষঙ্গিক কিছু অর্থ খরচ করে আপনি হতে পারেন একটি জমির চিরস্থায়ী মালিক। যদি আপনি একটি ফ্ল্যাট কিংবা বাসা বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিমাসে সেই ফ্ল্যাটের ভাড়া এবং বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল এর পাশাপাশি নিজস্ব খরচাপাতি তো আছেই। জমি ক্রয় করা হলে এত কিছুর মধ্য থেকে আপনি পাবেন কিছুটা স্বস্তি এবং মানসিক শক্তি।
কারণ আপনি একটি জমির মালিক হতে পেরেছেন যা কিনা আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কে করেছে সুদূরপ্রসারী। পাশাপাশি আপনার প্রতি মাসে একটি বড় অংকের খরচ কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভাড়াটিয়া রেখে সেখান থেকেও আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রতিমাসে নিশ্চিতভাবে আয় করতে পারছেন, যেটা কিনা আপনার একটি স্থায়ী। স্বভাবতই মানুষ থাকার জন্য নিজের মনের মত ফ্ল্যাট পায় না। সে ক্ষেত্রে এটি আপনার জন্য খুবই ভালো হবে। আপনি আপনার মনের মতো করে গুছিয়ে সুন্দর করে একটি বাড়ি তৈরি করে উন্নত জীবন যাপনও করতে পারছেন।
বেশ সাশ্রয়ী মূল্যে নিজের স্থায়ী ঠিকানা তৈরী করা যায় ফ্ল্যাট ক্রয়ের মাধ্যমে। আপনি নিজের প্রতিমাসের বাড়ি ভাড়ার খরচ সাশ্রয় করতে পারছেন যা কিনা বর্তমান বাজার মূল্য হতে অনেক বেশি। ফ্ল্যাট ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি একটি ফ্ল্যাট বা বাসার মালিকানা পাচ্ছেন। এছাড়া আপনি ফ্ল্যাট ক্রয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের একটি রাস্তাও খুলে নিলেন।
ফ্ল্যাট স্বভাবতই জমি ক্রয়ের থেকে সহজলভ্য। প্রত্যেকেরই ইচ্ছে থাকে নিজের বাড়ি নিজের মনের মতো করে সাজাতে, নিজের মনের মত করে গুছাতে। সে ক্ষেত্রে কম পুঁজিতে মনের ইচ্ছা পূরণ করার সহজ মাধ্যম হতে পারে ফ্ল্যাট ক্রয়। প্রতি মাসে একটি ছোট্ট আনুষঙ্গিক খরচ থাকলেও তা আপনাকে স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে দিচ্ছে। ফ্ল্যাট ক্রয় হতে পারে সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী উপায়।
জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সভাবতই জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করা হলে সেটি আপনার স্থায়ী ঠিকানা বলে গণ্য হবে। তাই জমি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ-
যদি বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ, কাচা-বাজার এবং আপনার কর্মক্ষেত্র আপনার ক্রয়কৃত জমি বা ফ্ল্যাট হতে অনেক দূরে হয় তবে আপনাকে পড়তে হবে ভোগান্তিতে। যদিও এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এমন স্থানে জমি বা ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়াটা কিছুটা কষ্ট সাধ্য। তাই জমি বা ফ্ল্যাট কেনার স্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করলে ভালো হয়।
জমি বা ফ্ল্যাট ক্রেতা হিসেবে আপনার কিছু করণীয় বিষয় রয়েছে। বর্তমান সময়ে জমি বা ফ্ল্যাট কেনা বেশ দুরূহ ব্যাপার। প্রথমত চাহিদামত জমি পাওয়া যায় না, তার উপর জমি বা ফ্লাটের আকাশচুম্বী দাম। সবকিছুর শেষে যখন আপনি কিনা জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করার কথা ভাবলেন তখন যদি আপনি ক্রেতা হিসেবে কিছু সর্তকতা অবলম্বন না করেন, তবে আপনার এতদিনের সঞ্চয়কৃত টাকা পুরোটাই বৃথা যাবে। তাই জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। যেমনঃ-
উপরোক্ত সাবধানতা অবলম্বন করলে আপনার বিনিয়োগটি সঠিক হওয়ার প্রায় শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। প্রয়োজন পড়লে এক্ষেত্রে আপনি আইনি সহায়তাও নিতে পারেন।
জমি বা ফ্ল্যাট কিনলেই হবেনা, তা রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে। লোহার জিনিস যেমন অনেক দিন ব্যবহার না করলে জং ধরে যায় তেমনই জমি বা ফ্ল্যাট যাই ক্রয় করি না কেন তা সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না পেলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে।
জমি ক্রয় করলে এজন্য প্রয়োজন একজন লোক, যে কিনা আপনার জমিকে দেখাশোনা করবে। অপর দিকে ফ্ল্যাট এর ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে কিছু চলতি খরচ বহন করতে হয়। যেমন পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি। জমি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এর কথা একবার চিন্তা করলে ভালো হয়।
সাধারণত ফ্ল্যাট ডেভলপার কোম্পানী থেকে কেনা হয়। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটের দাম অনুযায়ী আপনি জমির ওপর সামান্য মালিকানা পাবেন। যাকে কবলা দলিল বলা হয়। তা দলিলে উল্লেখ থাকবে। তাই ফ্ল্যাট কেনার আগে কাগজপত্র গুলো দেখে নেওয়া ভালো।
সরকারি নোটিফিকেশনকৃত জমি না কেনাই ভালো। কারণ এই নোটিফিকেশনের মানে হলো- সকলকে অবজ্ঞত করা যে, যদি কখনো জনগণের স্বার্থে সরকারের সেই জমি প্রয়োজন হয় তবে সরকার সে জমির অধিগ্রহণ করবে।
জাল দলিল চেনার অনেক মাধ্যম রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি অফিসের সংরক্ষিত দলিলের সাথে মিলিয়ে দেখা সর্বোত্তম মাধ্যম বলেই ধারণা করা যায়।
জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ সর্তকতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। একটা জমি বা ফ্ল্যাট এর পেছনে রয়েছে অনেকগুলো বছরের সাশ্রয়। তাই জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সর্তকতা এবং আইনি সহায়তা গ্রহণ করা উচিত।
সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ
জমি ক্রয় না কি ফ্ল্যাট ক্রয় লাভজনক ও উত্তম হবে তা যদি জানতে চান আমি বলবো, দুটোই সমানভাবে লাভজনক বিনিয়োগ হবে। এর ব্যক্তিভেদে পার্থক্য থাকবে। পছন্দ, অপছন্দ এবং সুবিধা, অসুবিধা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে গেলে একেকজনের কাছে একেকটা উত্তম মনে হবে। তবে আপনাদের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ করে দেওয়ার জন্য কিছু সম্ভাব্য যুক্তি ও কারণ তুলে ধরলাম।
অন্যদিকে ফ্ল্যাট কিনলে তার জন্য প্রতিবছর কিছু টাকা আনুসাঙ্গিক খরচের জন্য ব্যয় করতে হয়। আর আজ যে ফ্ল্যাট ১০ লক্ষ টাকায় কিনছেন আগামী ১০ বছরের তার দাম ১০ লক্ষ টাকার কম হবে, কিন্তু বেশি হবে না।
আসলে এই দুইটা বিনয়োগের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে গেলে ব্যক্তিগত রুচি, চাহিদা, সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি চলে আসে।
January 23, 2022