যেভাবে ফ্ল্যাট ও রুমের সাইজ নির্ধারণ করবেন

পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপর আপনার ফ্ল্যাটের সাইজ ও রুম নির্ধারন

May 25, 2024

আপনার স্বপ্নের ফ্ল্যাটটি কেনার কথা ভাবছেন? ফ্ল্যাট বা এপার্টমেন্ট কেনার আগে বিশেষ কিছু বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। এই বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফ্ল্যাটের সাইজ নির্ধারন। এক্ষেত্রে ফ্ল্যাট বুকিং দেয়ার আগেই এর সাইজ সম্পর্কে আবাসন নির্মাতার কাছ থেকে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। কেননা একবার তৈরি হয়ে গেলে সেটাকে নিজের মত করে ভেঙ্গে আবার তৈরি করা সম্ভব নয়।

গৃহ নির্মান এমনিতেই ব্যায়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ কাজ তার উপর যদি একাধিক মালিকানার বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট হয় তাহলে তো কথায় নেই। আপনি একার সিদ্ধান্তে ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরীণ ডিজাইনের খুব বেশী একটা পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই কেনার আগেই পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপর নির্ভর করে আপনার ফ্ল্যাটের সাইজ ও রুম নির্ধারন করে নিতে হবে।

ফ্ল্যাটের সাইজ নির্ধারণ বিবেচ্য বিষয়

আজকাল নিজের এক খন্ড জমিতে বাড়ি তৈরির চেয়ে ফ্ল্যাট বা এপার্টমেন্ট কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশী। একটি ফ্ল্যাট কেনা মানে সারা জীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগ করা বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের কাছে। তাদের কাছে একটা নিজের ফ্ল্যাট কেনা অনেকটা স্বপ্ন পূরনের মত। তাই ফ্ল্যাট কেনার আগে শুধু টাকা নয় আরো কিছু বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

এই বিষয়গুলোর মধ্যে ফ্ল্যাটের আকার অন্যতম। কেননা কেনার পর যদি পরিবারের সদস্যদের জন্য উপযুক্ত বা পর্যাপ্ত না হয় তবে সেটা বড় সমস্যা হবে। তাই একজন ক্রেতা হিসেবে আপনি যদি কেনার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখেন তাহলে ফ্ল্যাটের সাইজ নির্ধারন করা সহজ হবে। চলুন দেখি সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে আপনার কেমন সাইজের ফ্ল্যাট দরকার।

১. আপনার পরিবারের আকার মূল্যায়ন করুন

ফ্ল্যাটের সাইজ নির্ধারনের আগে এখন এবং ভবিষ্যতে এই বাড়িতে কত লোক বাস করবে তা নির্ধারণ করুন। আপনার বাবা-মা, পরিবারের অন্যান্য সদস্য বা বন্ধু ও আত্মীয়েরা যদি দলবদ্ধভাবে মাঝে মাঝে আসার এবং কয়েক মাস ধরে থাকতে পারে এমন সম্ভাবনা থাকে তাহলে এমন অতিথিদের জন্য বসার ঘরের স্থান মূল্যায়ন করুন।

এবং আপনি যদি বাচ্চার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে আসন্ন ছোট সদস্যদের থাকা ও খেলাধুলা করার জন্য বাচ্চাদের ঘরের আগাম পরিকল্পনা করুন।

২. বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করুন

আপনার পরিবারের আকার মূল্যায়ন করার পরে, প্রতিটি সদস্যের ব্যক্তিগত পছন্দগুলোকে মূল্যায়ন করুন। আপনার পরিবার বড় হতে চলেছে বলে একটি বড় জায়গায় বিনিয়োগ করা সব সময়ই ভালো সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়াও, একটি এটাচড টয়লেট এবং শিশুদের ঘর সহ আপনার একটি সেপারেট স্টাডি রুম অথবা ওয়ার্ক প্লেস এর প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়াও একটি বড় ফ্যামিলি লিভিং রুম, ডাইনিং রুম, সেপারেট বেডরুম এবং রান্নাঘর থাকা প্রয়োজন।

৩. ফ্ল্যাটের সঠিক স্কয়ার ফুটেজ নির্ধারণ করুন

আপনার পরিবারের আকার এবং প্রয়োজনীয় ও সৌখিন আসবাবপত্র সহ আপনার ফিট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির উপর নির্ভর করে কত বর্গফুট প্রয়োজন তা নির্ধারণ করুন। বর্তমানে আপনি যদি সিঙ্গেলও থাকেন তার পরেও স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এড়িয়ে চলুন।

তবে আপনি যদি অবিবাহিত হন এবং আপনার বাজেট যদি সীমিত থাকে তাহলে অল্প আয়তনের স্টুডিও এপার্টমেন্ট কিনতে পারেন কিন্তু এই গুলোতে জায়গা খুব কম থাকে বিধায় অতিথি বা অন্য সদস্যের সাথে প্রাইভেসি রক্ষা করা কঠিন।

আপনার লিভিং স্পেসে কী ফিট করা যায় এবং কী করা যায় না তা আগেই ঠিক করে নিন। সব কিছু বিবেচনা করে আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য কত স্কয়ার ফুট যায়গা প্রয়োজন তা যদি নির্ভুল ভাবে পরিমাপ করতে না পারেন তাহলে একজন অভিজ্ঞ রিয়েল এস্টেট পরামর্শদাতার সাহায্য নিতে পারেন।

৪. বেডরুমের সংখ্যা নির্ধারণ করুন

ঢাকা, চট্টগ্রাম, বা রাজশাহীর মত বড় বড় শহরে নতুন অ্যাপার্টমেন্ট বেছে নেওয়ার সময় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সম্পত্তির একক আকার নির্বিশেষে, বাড়িতে আপনার পরিবারের সকল সদস্যের জন্য উপযুক্ত সংখ্যক বেডরুম রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

এছাড়াও অ্যাপার্টমেন্টে অতিরিক্ত বাথরুম আছে কিনা তা জেনে নিন যা আপনার প্রয়োজন হবে, বিশেষ করে যদি আপনার একটি বড় পরিবার থাকে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখুনো যৌথ পরিবার প্রচুর দেখা যায়। এই ধরনের পরিবারে সদস্যদের মধ্যে প্রাইভেসি রক্ষা করা এবং নিজের সৌখিনতা বজায় রাখার জন্য পৃথক বেডরুম ও এটাচড টয়লেট থাকা জরুরি। বিশেষকরে বয়স্ক সদস্যদের জন্য।

৫. সুযোগ সুবিধা এবং লে আউট বিবেচনা করুন

একটি ফ্ল্যাটের মেঝে প্ল্যানিং পেপার বা নক্সায় পর্যাপ্ত দেখাতে পারে। কিন্তু আপনাকে যাচাই করতে হবে যে, বাস্তবে সেই সমস্ত স্পেসগুলো ফ্ল্যাটের সমস্ত সুবিধার জন্য উপযুক্ত হবে কি না। এই জন্য ফ্ল্যাটের লে আউটে ফোকাস করুন। এমনকি যদি ফ্ল্যাটটি একটি বড় এরিয়া জুড়ে বিস্তৃতও হয় কিন্তু তাতে অনেক ছোট ছোট জায়গা থাকে তাহলে আপনি সঙ্কুচিত বা নিজেকে বাক্সবন্দি বোধ করতে পারেন। তাই ফ্ল্যাট কেনার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে ঘুরে দেখুন।

ভালোভাবে এর লে আউটের সাথে ব্যবহার যোগ্য যায়গা মিলিয়ে দেখুন। কারন অনেক সময় রুমের ভেতর বীম থাকতে পারে অথবা ওয়াল কেবিনেট অথবা ওয়াল আলমিরা তৈরির কারনে অনেক যায়গা ঘিরে যেতে পারে। তাই নক্সায় ঘরের আয়তন বড় দেখালেও আদতে ব্যবহার করা যায় অল্প কিছু স্পেস মাত্র। তাই এই সব কিছুই ফ্ল্যাট কেনার আগেই দেখে বুঝে নিতে হবে যেমন টিভি দেখার জন্য বিনোদনের জায়গা ইত্যাদি।

৬. ফ্ল্যাটের সাথে কমন স্পেসগুলোর কথাও চিন্তায় রাখুন

বড় বড় এপার্টমেন্টগুলোর সাথে সাধারনত পার্কিং স্পেস থাকে। সেই সাথে ছাদ ব্যবহারের সুবিধা অভ্যন্তরীন কমিউনিটি স্পেস, বাচ্চাদের জন্য খেলার স্পেসও থাকে। আপনার ফ্ল্যাটের সাথে এই কমন স্পেসের সুবিধাগুলো আছে কিনা জেনে নিতে ভুলবেন না।

এই কমন স্পেসগুলো তাৎক্ষনিক ব্যবহারের জন্য না হলেও পরবর্তীতে অনেক কাজে আসে। এখন হয়ত আপনার গাড়ি নেই তাই পার্কিং নিয়ে ভাবছেন না। কিন্তু ভবিষ্যতে গাড়ি কেনা হলে পারকিং না থাকার কারনে বিপদে পড়তে পারেন।

আশাকরি পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপর আপনার ফ্ল্যাটের সাইজ ও রুম কিভাবে নির্ধারন করবেন তা বুঝতে পেরেছেন। এখন চলুন দেখি আপনার ফ্ল্যাটটি যদি ঢাকার ভেতর হয় তাহলে এর সাইজ নির্ধারনের জন্য কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন।

আপনার সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরনের চেষ্টা করুন

ফ্ল্যাটের সাইজ কত বড় হবে সেটা অনেকটায় নির্ভর করে আপনার বাজেটের উপর। অর্থাৎ আপনার সাধ্যের মধ্যে আপনার সখ পূরন করার চেষ্টা করুন। ঢাকা শহরে বর্তমানে কমের মধ্যে ৫০ লাখ থেকে শুরু করে ২০ কোটি বা তার বেশী দামেরও ফ্ল্যাট পাওয়া যায়।

আপনার বাজেট যদি ৫ থেকে ১০ হাজার প্রতি স্কয়ার ফুট হয় তাহলে মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরার মত এলাকায় ফ্ল্যাট দেখতে পারেন। আর যদি অভিজাত এলাকা যেমন ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে চান তবে গুনতে হবে ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা প্রতি স্কয়ার ফুটের জন্য।

ঢাকায় বাড়ছে ছোট ফ্ল্যাটের জনপ্রিয়তা

একটি ফ্ল্যাট কেনার সময়, বাজেট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনই আপনার পরিবারের সদস্যদের সংখ্যাও গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা শহরে ছোট ফ্ল্যাটের চাহিদা তুলনামূলক বেশি।

সাম্প্রতিক করা জরিপের তথ্য এর তথ্য অনুযায়ী, ১০০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ছে। আপনার পরিবারে যদি স্বামী, স্ত্রী সাথে ১ জন বা ২ জন সন্তান থাকে তাহলে ২-৩ রুমের ছোট ফ্ল্যাট আপনার উপযুক্ত। ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই ছোট ছোট ফ্ল্যাট পাওয়া যায়।

পরিবারের সদস্যদের সংখ্যার ভিত্তিএ মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট

আমাদের অনেকের সাথেই আমাদের মা বাবা ও আমদের পরিবারের থাকে। আপনিও তাদের মত হলে আপনার জন্য একটি মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট প্রয়োজন হবে। আনুমানিক ১৫০০ থেকে ২৫০০ বর্গফুট হলে তাকে মাঝারি আকৃতির ফ্ল্যাট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

এই ধরনের ফ্ল্যাটে ৩ থেকে ৪টি বেডরুম, ২-৩টি ওয়াশরুম, লিভিং ও ডাইনিং এবং রান্নাঘর থাকতে পারে। এই ফ্ল্যাটগুলোতে ৫ থেক ৭ জন সদস্য থাকতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত ২ জন সদস্য এডজাস্ট করে নিতে পারবে।

বড় আকারের পরিবারের জন্য বড় ফ্ল্যাট

আপনার কী যৌথ পরিবার? আপনার সাথে আপনার মা, বাবা, ভাই, বোন ও তাদের পরিবার একই সাথে থাকে? তাহলে আপনার একটি বড় ফ্ল্যাটের প্রয়োজন। আনুমানিক ২০০০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট এই ধরনের বড় পরিবারগুলোর জন্য ভালো হবে। এই আয়তনের একটি ফ্ল্যাটে ৪ থেকে ৫ বেডরুমের সাথে ৩/৪টি ওয়াশরুম, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, রান্নাঘর এবং কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন নামাজের ঘর ও স্টাডি রুম থাকতে পারে।

শেষাংশ

একটা ফ্ল্যাট কেনা মানে সারা জীবনের সঞ্চয়কে বিনিয়োগ করা। একটা ফ্ল্যাট আপনার ও আপনার সন্তানের জন্য শুধু আবাসস্থলই নয় বরং ভবিষ্যতের সম্পদও। তাই কেনার আগে সদস্যদের কথা মাথায় রেখে ফ্ল্যাটের সাইজ নির্ধারন করুন, বাজেট পর্যালোচনা করুন, রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে ভালোভাবে ভাবুন প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহন করুন।

আশা করি উপরের টিপসগুলি আপনাকে আপনার বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পরিবারের সদস্যদের জীবনযাত্রার প্রয়োজনের জন্য উপযুক্ত ফ্ল্যাটের আকার নির্বাচন করতে সাহায্য করবে৷

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments