ফ্রিজের গন্ধ দূর করার সবচেয়ে কার্যকর ও পরীক্ষিত পদ্ধতি!

ফ্রিজ খুলেই যদি এক ধরণের অদ্ভুত গন্ধে নাক সিঁটকাতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে, ভেতরে কোথাও কিছু সমস্যা আছে। আর এই সমস্যা অনেকেরই পরিচিত! আপনি যত সুন্দরভাবে রান্না করেন না কেন, যদি আপনার ফ্রিজ থেকে গন্ধ বের হয়, তাহলে পুরো রান্নাঘরের পরিবেশটাই বিরক্তিকর হয়ে পড়ে।

অনেকেই হয়তো ভাবেন, নতুন ফ্রিজ হলে এমন হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পুরনো হোক বা নতুন, যদি নিয়মিত যত্ন না নেওয়া হয়, তাহলে ফ্রিজও তার “ফ্রেশ” ভাব হারিয়ে ফেলে।

আসলে, ফ্রিজের এই অবাঞ্ছিত গন্ধটা শুধু যে বিরক্তিকর, তা কিন্তু নয়। এটা অনেক সময় ফ্রিজে রাখা খাবারগুলোর গুণাগুণও নষ্ট করে ফেলে। তাই আজ আমি আপনাদের জানাবো কিছু সহজ আর ঘরোয়া উপায়, যা দিয়ে আপনারা খুব সহজেই এই আপদটা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে আর দেরি কেন, চলুন শুরু করা যাক!

ফ্রিজে দুর্গন্ধ হওয়ার সাধারণ কারণগুলো

Contents

ফ্রিজে কেন এই বিশ্রী গন্ধ হয় সেটা আগে জানা দরকার, তাই না? তাহলে চলুন, কয়েকটা সাধারণ কারণের ওপর চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাকঃ

১. অতিরিক্ত সময় ধরে খাবার সংরক্ষণ করা

আমরা অনেকেই বাজার থেকে বেশি করে জিনিস কিনে এনে ফ্রিজ ভরে রাখি, ভাবি পরে ধীরে-সুস্থে খাওয়া যাবে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কিছু খাবার অনেকদিন ধরে থাকার কারণে পচে যায় এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। আবার পচা খাবারের সংস্পর্শে ভালো খাবার এলে, ভালো খাবারও নষ্ট হয়ে যায়।

২. ড্রিপ ট্রে বা ড্রেনেজ প্যানে পানি জমে থাকা

ফ্রিজের পেছনে একটা ছোট ড্রেনের মতো থাকে, যেখানে বরফ গলা পানি জমা হয়। এই পানি যদি দীর্ঘদিন জমে থাকে, তাহলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় এবং বাজে গন্ধ তৈরি হয়। তাই ফ্রিজের ড্রিপ ট্রেতে অনেকদিন পানি জমে থাকলে বা ময়লা জমলে তা পরিষ্কার করা উচিত।

৩. ফ্রিজের ভেতরে ময়লা জমে থাকা বা পরিষ্কার না করা

আমরা হয়তো ওপর থেকে ফ্রিজটা পরিষ্কার করি, কিন্তু ভেতরের তাকে বা কোনায় অনেক সময় খাবারের টুকরা, তরল বা দুধ পড়ে গিয়ে জমে ময়লা লেগে থাকে। এগুলো পচে গিয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।

৪. পুরানো বা মেয়াদোত্তীর্ণ ফিল্টার ব্যবহার করা

কিছু আধুনিক ফ্রিজে গন্ধ শোষণের জন্য ফিল্টার থাকে। কিন্তু এই ফিল্টারগুলো নিয়মিত পরিবর্তন না করলে, সেগুলো নিজেরাই দুর্গন্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ফিল্টারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার বা পরিবর্তন করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টা খেয়াল রাখা জরুরি।

৫. খাবারের পাত্রে ঠিকমতো ঢাকনা ব্যবহার না করা

অনেক সময় আমরা তাড়াহুড়োয় বা অসাবধানতাবশত খোলা পাত্রে খাবার ফ্রিজে রেখে দিই। এতে খাবারের গন্ধ পুরো ফ্রিজে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটা বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ফ্রিজের মধ্যকার আর্দ্র পরিবেশ খাবারে ছত্রাক তৈরি করতে পারে।

৬. বারবার বা দীর্ঘ সময় ধরে ফ্রিজের দরজা খোলা রাখা

ঘন ঘন ফ্রিজের দরজা খুললে বা অনেকক্ষণ ধরে খোলা রাখলে বাইরের বাতাস ভেতরে ঢোকে এবং ভেতরের ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যায়। এর ফলে ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা দুর্গন্ধের কারণ হয়।

ঘরোয়া উপায়ে দুর্গন্ধ দূর করার কার্যকর কৌশল

এখন আসা যাক মূল কথায়, ফ্রিজের গন্ধ দূর করার উপায়। কী কী ঘরোয়া উপায় আছে, যা দিয়ে আমরা আমাদের ফ্রিজটাকে

Close-up view of a refrigerator thermostat with visible yellowish stains and dirt buildup inside the fridge.

আবার আগের মতো সুরভিত করে তুলতে পারি? চিন্তা নেই, খুব কঠিন কিছু না। হাতের কাছে থাকা জিনিস দিয়েই কাজ হয়ে যাবে!

১. ফ্রিজের তাপমাত্রা সামান্য কমিয়ে দেওয়া

অনেক সময় ফ্রিজের তাপমাত্রা একটু বাড়ানো থাকলে খাবারের পচন দ্রুত হয় এবং গন্ধ ছড়ায়। তাই থার্মোস্ট্যাট ঘুরিয়ে তাপমাত্রা একটু কমিয়ে দিন। তবে খেয়াল রাখবেন, খুব বেশি কমিয়ে দিলে আবার খাবার জমে যেতে পারে। তাপমাত্রা ৩-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন।

২. কিছুক্ষণ ফ্রিজের দরজা খুলে ভেতরের বাতাস বের হতে দেওয়া

ফ্রিজ পরিষ্কারের সময় বা পুরনো খাবার ফেলার পরে কিছুক্ষণ ফ্রিজ খোলা রাখুন। এতে ভেতরের আবদ্ধ, দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস বেরিয়ে যাবে এবং বাইরে থেকে ফ্রেশ বাতাস ঢুকবে। তবে হ্যাঁ, বিদ্যুতের কথাটাও একটু মাথায় রাখবেন!

৩. নষ্ট ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার দ্রুত সরিয়ে ফেলা

ফ্রিজের গন্ধ দূর করার প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো ভেতরের নষ্ট বা মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবারগুলো খুঁজে বের করে সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দেওয়া। বিশ্বাস করুন, অনেক সময় এই একটা কাজই অর্ধেক গন্ধ দূর করে দেয়!

৪. বেকিং সোডা, কফি গ্রাউন্ডস, লেবুর খোসা ইত্যাদির ব্যবহার

বেকিং সোডা, কফি গ্রাউন্ডস, লেবুর খোসা – এগুলো প্রাকৃতিক দুর্গন্ধ শোষক হিসেবে কাজ করে।Baking soda in a glass jar, lemon peels, and coffee grounds on a colorful gradient background, representing natural deodorizing ingredients.

  • বেকিং সোডাঃ একটা ছোট বাটিতে কিছুটা বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাইকার্বোনেট) নিয়ে ফ্রিজের ভেতরে রেখে দিন। বেকিং সোডার গন্ধ শোষণের অসাধারণ ক্ষমতা আছে। দু-তিন দিন পর পর এটা পাল্টে দিন।
  • কফি গ্রাউন্ডসঃ শুকনো কফি গুঁড়োও খুব ভালো গন্ধ শোষক হিসেবে কাজ করে। একটা খোলা পাত্রে কফি গ্রাউন্ডস রেখে ফ্রিজে রেখে দিন।
  • লেবুর খোসাঃ কয়েক টুকরো লেবুর খোসা ফ্রিজের তাকে রেখে দিলে তাজা একটা গন্ধ বজায় থাকে এবং দুর্গন্ধ দূর হয়। লেবুর তাজা পাতাও রাখতে পারেন।

এছাড়াও ভিনেগার, কাঠকয়লা, এমনকি আলু কেটে রাখলেও তা দুর্গন্ধ শোষণ করতে পারে।

৫. ড্রিপ ট্রে বা প্যান ভালোভাবে পরিষ্কার করা

আগেই বলেছি, ড্রিপ ট্রেতে জমে থাকা নোংরা পানি আর ব্যাকটেরিয়াই কিন্তু অনেক সময় গন্ধের মূল কারণ হয়। ফ্রিজের পেছনের ডিপ ট্রে বা ড্রেনেজ প্যানটা বের করে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।

৬. ফিল্টার নিয়মিত পরিবর্তন করা

আপনার ফ্রিজে যদি গন্ধ শোষণের জন্য ফিল্টার থাকে, তাহলে প্যাকেজের নির্দেশনা অনুযায়ী সেটা নিয়মিত পরিবর্তন করুন। বেশিরভাগ ফ্রিজের ফিল্টার ৬ মাস পরপর পরিবর্তন করতে হয়। পুরনো ফিল্টার নিজেই দুর্গন্ধের উৎস হতে পারে।

৭. ফ্রিজের ভেতরের অংশ ভালোভাবে মুছে পরিষ্কার করা:

হালকা গরম পানিতে সামান্য লিকুইড ডিশ ওয়াশার বা ভিনেগার মিশিয়ে একটা নরম কাপড় দিয়ে ফ্রিজের ভেতরের সব তাক, দেয়াল এবং অন্যান্য অংশ ভালো করে মুছে নিন। মোছার পর শুকনো কাপড় দিয়ে আবার মুছে ফেলুন। ভিনেগার প্রাকৃতিকভাবে দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

৮. রাবার গ্যাসকেট পরিষ্কার রাখা

ফ্রিজের দরজার চারপাশে যে রাবারের অংশটা থাকে সেটাকে বলা হয় রাবার গ্যাসকেট। এটা ফ্রিজের দরজা ঠিকমতো বন্ধ হতে সাহায্য করে। এখানে অনেক সময় ময়লা জমে থাকে এবং গন্ধ তৈরি হতে পারে। তাই একটা ভেজা কাপড় দিয়ে এই অংশটাও নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

উপসংহার

বুঝলেন তো, ফ্রিজের গন্ধ দূর করা তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। একটুখানি সচেতনতা আর কিছু সহজ ঘরোয়া কৌশল অবলম্বন করলেই আমরা আমাদের ফ্রিজটাকে রাখতে পারি একদম ঝকঝকে আর গন্ধমুক্ত।

মনে রাখবেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ফ্রিজ শুধু যে খাবারের গন্ধ ভালো রাখে তাই নয়, এটি আপনার ঘরের পরিবেশকেও স্বাস্থ্যকর রাখে। তাই, আর দেরি না করে আজই আপনার ফ্রিজটাকে একটু সময় দিন। দেখবেন, আপনার সামান্য চেষ্টাতেই আপনার ফ্রিজ আবার ভরে উঠবে সতেজতায়!

কেমন লাগলো আজকের টিপসগুলো, জানাতে ভুলবেন না কিন্তু! আর হ্যাঁ, আপনার যদি অন্য কোনো ঘরোয়া টিপস জানা থাকে, তাহলে কমেন্ট বক্সে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ আপনাকে।