ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কার করবেন কীভাবে

ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কার করবেন কীভাবে?

August 21, 2022

আসসালামু আলাইকুম, আজকে বাড়ির গৃহিণীদের জন্য খুবই উপকারী একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

আজকের দিনে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণে আমরা ফ্রিজের ওপর ওতপ্রোতভাবে নির্ভরশীল।

ফ্রিজ আমাদের প্রতিদিনের অনেক কাজের চাপ কমিয়ে দিয়েছে। যেমন ধরুন- আজকে আপনি একটি খাবারের মেনু রান্না করলেন, তো সেটা আপনি ফ্রিজে সংরক্ষণ করে আগামীকালও খেলেন। যা আপনার আগামীকালের সময় কিছুটা বাচিয়ে দিল।

এত উপকারী একটি হোম আ্যপ্লায়েপন্সের পরিষ্কারের দায়িত্বটাও তো নিতে হবে। আর সেই দায়িত্ব টা বাড়ির গৃহিণীদের ওপরই পড়ে মূলত।

সেজন্যই গৃহিনীদের জন্য এটি একটি উপকারী পোস্ট। অনেকেই মনে করেন ফ্রিজ পরিষ্কার করা খুবই ঝামেলার একটি কাজ। তাই আপনাদের ঝামেলা দূর করতে আজ আপনাদের কে জানাবো ঘরোয়া ভাবে ফ্রিজ পরিষ্কার করবেন কীভাবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কার করার উপায়

কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় হোম আ্যপ্লায়েন্সের মধ্যে ফ্রিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিজে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা হয়। ফ্রিজ ব্যবহারের পাশাপাশি ফ্রিজটাকেও যত্নে রাখতে হবে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে ফ্রিজ অতিদ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে আপনাকে আবারও নতুন ফ্রিজ কিনতে হবে অথবা সার্ভিসিং ব্যয় গুনতে হবে।

নিচে সঠিকরুপে ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কার করবেন যেভাবে তার কিছু পদক্ষেপ দেওয়া হলো-

  • ফ্রিজের কয়েল পরিষ্কার করুন
  • বরফ সরিয়ে ফেলুন
  • ফ্রিজের খাবার সরিয়ে ফেলুন
  • শেলফ ও ট্রে পরিষ্কার করুন
  • ফ্রিজের ভিতরে ও বাইরের অংশ পরিষ্কার করুন

এবার আসুন এই ধাপগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই-

ফ্রিজের কয়েল পরিষ্কার করুন

ফ্রিজ পরিষ্কারের আগে সর্বপ্রথম আপনি ফ্রিজের বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করুন। এরপর ফ্রিজের পিছনে ও নিচে কয়েলের ধুলাবালি ও ঝুল নরম সুতি কাপড় বা নরম ঝাড়ু দিয়ে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করে নিন।

বরফ সরিয়ে ফেলুন

ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য ফ্রিজটি কোন সময়ে পরিষ্কার করবেন তা আগাম ভেবে সেই সময় থেকে ১/২ ঘন্টা আগে ফ্রিজের বৈদ্যুতিক লাইন অফ করুন।

এতে ফ্রিজে জমা সব বরফ গলে যাবে। আপনাকে আর কষ্ট করে বরফ তুলতে হবে না। আপনি বরফ তুলতে কাগজের টুকরাও ব্যবহার করতে পারেন।

ফ্রিজের খাবার সরিয়ে ফেলুন

ফ্রিজের সংরক্ষিত সব খাবার বের করে ফেলুন। এতে আপনার ফ্রিজ পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে। ফ্রিজ পরিষ্কার হয়ে গেলে আবার খাদ্যদ্রব্যগুলো সাজিয়ে ফেলবেন।

নিজের বাড়িতে যদি একাধিক ফ্রিজ থাকে তাহলে খাবারগুলো অন্য ফ্রিজে রাখুন। আর বাড়িতে ফ্রিজের সংখ্যা একটাই হলে ফ্রিজে রাখা জরুরি এমন খাবারগুলো পাশের বাসার কারো ফ্রিজে রাখার চেষ্টা করুন।

শেলফ ও ট্রে পরিষ্কার করুন

এ পর্যায়ে, ফ্রিজের ট্রে ও শেলফগুলো খুলে বের করে ফেলুন। ট্রেগুলো সরাসরি গরম পানিতে মোটেও ভিজিয়ে রাখবেন না।কারণ, ফ্রিজের মধ্যে এগুলো সবসময় ঠান্ডা থাকে। হঠাৎ করে গরম পানি দিলে চিড় ধরতে পারে। তাই ট্রেগুলো কুসুম গরম পানিতে কোমল ডিটারজেন্ট মিশিয়ে স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন।

এতে জীবাণু দূর হয়ে যাবে। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে আলো-বাতাসপূর্ণ  জায়গায় রোদে শুকাতে দিন। ফ্রিজের শেলফগুলোও স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ধুয়ার পরে সেগুলো উজ্জ্বল আলো ও বাতাসযুক্ত স্থানে শুকাতে দিন। তবে ছাদের কড়া রোদে দেওয়া যাবে না।

ফ্রিজের ভিতরে ও বাইরের অংশ পরিষ্কার করুন

বেকিং পাউডার  ও কোমল ডিটারজেন্ট মিশিয়ে বোতলে ভরে ফ্রিজের ভিতরের অংশে স্প্রে করে নিন। নরম কাপড় দিয়ে ফ্রিজের ভিতরের অংশ ঘষে পরিষ্কার করে নিন। একইভাবে বাইরের দিকও পরিষ্কার করে নিন। কঠিন দাগের জায়গাগুলোতে একটু বেগ দিয়ে ঘষবেন তাহলে কঠিন দাগগুলোও উঠে যাবে।

অনেক সময় ফ্রিজ পরিষ্কার করার পরেও খাবার, মাছ, মাংস ইত্যাদির দূর্গন্ধ থেকে যায়। এই সমস্যা দূর করতে সাদা ভিনেগার মিশ্রিত পানি দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে পারেন।

ফ্রিজ পরিষ্কার হয়ে গেলে  সাথে সাথে ফ্রিজের বৈদ্যুতিক সংযোগ না দিয়ে কিছুক্ষণ পরে দিন। তারপর,  একবোতল পানি রেখে কিছুক্ষণ পরে চেক করুন যে ঠান্ডা হচ্ছে কী না। ঠান্ডা হলে বাকি খাদ্যাপাদান গুলো রাখুন।

ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কারে কিছু সতর্কতা

ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কারের সময় ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত নইতো নানারকম সমস্যায় পড়তে হয়। যেমন-

১. ফ্রিজ পরিষ্কার করার আগে ভালোভাবে নিশ্চিত হোন যে ফ্রিজের বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ আছে  নইতো বড়সড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

২. ফ্রিজ পরিষ্কারে খসখসে কাপড় ব্যবহার করবেন না। সবসময় নরম কাপড় ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। নইতো ফ্রিজের বিভিন্ন অংশের প্লাস্টিক আবরণ উঠে যেতে পারে।

৩. ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কারের পরে খাবার রাখার আগে ফ্রিজ ভালোভাবে মুছে শুকিয়ে নিন। কোনোভাবে ভেজা অবস্থায় রাখবেন না।

৪. ফ্রিজ পরিষ্কারের সময় ফ্লোরে যে পানি পড়েছে সেগুলো ভালোভাবে মুছে নিন।

৫. ফ্রিজ কখনোই দেয়াল ঘেঁষে রাখবেন না। দেয়াল থেকে একটু দূরে রাখুন।

৬. ফ্রিজে  শাকসবজি রাখার আগে আটি খুলে রাখুন। অনেকাংশে, আটির মধ্যে পোকামাকড় এমনকি সাপও থাকতে পারে যেটা আপনার পরবর্তীতে প্রাণনাশের কারণ না হয়ে দাড়ায়।

৭. ফ্রিজ বারবার খুলবেন না। ডোর খোলা-আটকানোর সময় নিশ্চিত হোন যে ঠিকভাবে আটকিয়েছেন।

ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কার ও দুর্গন্ধ দূর করার  কিছু গুরত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো-

১. ভিনেগারঃ ফ্রিজের মধ্যে পরিষ্কারের সময় গরম পানির সাথে ভিনেগার দিয়ে পরিষ্কার করুন, এতে ফ্রিজের মধ্যের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

২. লেবুঃ এক টুকরা লেবু ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিন, এতে ফ্রিজের গন্ধ চলে যাবে।

৩. ওটমিলঃ ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কার করার উপায় হিসেবে ওটমিল যা আজকাল সবাই সকালের নাস্তায় খেয়ে থাকে তা বাটিতে করে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিলে দুর্গন্ধ চলে যাবে।

৪. কফিঃ  কফি দুর্গন্ধ শুষে নেয়। তো ফ্রিজের মধ্যে কফির গুঁড়ি রেখে দিলে দুর্গন্ধ চলে যাবে।

৫. কাঠকয়লাঃ কাঠকয়লা যেমন রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয় তেমনি ফ্রিজের দুর্গন্ধও দুর করে।

৬. ভ্যানিলা এসেন্সঃ ছোট ছোট তুলার টুকরা ভ্যানিলা এসেন্সের মধ্যে ভিজিয়ে রাখলে দুর্গন্ধ দূর হয়ে সুন্দর একটি সেন্ট ছড়িয়ে যাবে ফ্রিজের মধ্যে।

৭. স্বাভাবিক তাপমাত্রাঃ ফ্রিজ ব্যবহারে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন। তাপমাত্রা অস্বাভাবিকতার কারণে জীবাণু জন্মাতে পারে। ফলে, দূর্গন্ধ সৃষ্টি হবে। ফ্রিজে তাপমাত্রার আদর্শ মান ৩৫-৩৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১.৬- ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় খাবার টাটকা থাকবে কিন্তু বরফ জমবে না। ডিপ ফ্রিজের আদর্শ তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা – ১৭.১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

৮. ফ্রিজে খাবার রাখলে এয়ারটাইট বক্সে রাখবেন। এতে খাবার পচার গন্ধ বাইরে ছড়াতে পারবে না। ফ্রিজও গন্ধ হবে না। বিশেষ করে রসুন, পেঁয়াজ বাটা ইত্যাদি।

৯. বেকিং সোডাঃ ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে একবাটি বেকিং সোডা রেখে দিন।

দৈনন্দিন  জীবনে ফ্রিজ  ব্যবহারে আরো কিছু টিপসঃ

১. ফ্রিজে শাকসবজি ও ফলমূল রাখার আগে ধুয়ে রাখুন। ফলমূল ও শাকসবজি আলাদা আলাদা জায়গায় রাখুন।

২. দ্রুত পচনশীল খাবার বেশিদিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করবে না। কাঁচামরিচের  বোটা ছাড়িয়ে মরিচ ফ্রিজে রাখুন।

৩. মাছ- মাংস রাখতে ভালোভাবে পানি ঝড়িয়ে রাখুন।

৪. ফ্রিজে গরম খাবার রাখবেন না। স্বাভাবিক রুম টেমপারেচরে আসলে তারপর রাখুন।

৫. ফ্রিজ খুলতে ব্যবহারকৃত হাতলে রাবার ব্যবহার করতে পারেন যাতে দাগ না পড়ে।

৬. ফ্রিজে বেশি জিনিস রাখবেন না। বেশি জিনিস রাখলে দুর্গন্ধ বেশি হয়।

সর্বশেষ কথা

ফ্রিজ অতি প্রয়োজনীয় বস্তু হওয়ায় এটি ব্যবহারে আমাদের যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। ১৫-২০ দিন পর অন্তত একবার ফ্রিজ পরিষ্কার করুন। আপনার সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য নিরাপদে রাখুন।

ঘরোয়া নিয়মে ফ্রিজ পরিষ্কার করার উপায় সম্পর্কে আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আশা করি, আমাদের এই লেখার প্রচেষ্টা আপনার উপকারে আসবে। আজ এখানে শেষ করছি।

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments