rental flat decorating ideas

ভাড়া বাসা সাজানোর কিছু চমৎকার আইডিয়া

June 21, 2022

বাসা সাজানোর আইডিয়া

ভাড়ায় থাকুন কিংবা নিজের বাড়িতেই থাকুন, যেখানেই থাকুন না কেনো দিনশেষে ঘরে ফিরে কিংবা সারাদিন ঘরেই সময় কাটাতে গিয়ে যেনো কোনোরকম বিরক্তি না আসে তার ব্যবস্থা করে নেওয়াটা বেশ বুদ্ধিমানের কাজ। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন বাসা সাজানোর আইডিয়া। যা নিয়ে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আশা করি আমাদের আজকের এই লেখাটি আপনাকে কিছুটা হলেও উপকৃত করবে।

বাড়িওয়ালাকে অনুন

বেশিরভাগ বাড়িওয়ালাই চান না তার বাড়িতে এক্সট্রা কোনো সংস্কারের কাজ করা হোক। এমনকি অনেক বাড়িওয়ালা সামান্য পেরেক আটকাতে গেলেও নানান কথা শুনিয়ে যান। যা অনেকের কাছেই বেশ বিরক্তিকর মনে হতে পারে। তবে যেখানে সমস্যা আছে সেখানে সেই সমস্যার ১০ গুণ সমাধান রয়েছে। তাই নিজের বাসাটিকে পছন্দ মতো সাজিয়ে মানসিক শান্তি পেতে আপনাকেই সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে হবে৷

এক্ষেত্রে আপনি চাইলেই বাড়িওয়ালার সাথে বসে কথা বলতে পারেন। তাকে পুরো ব্যাপারটিই বুঝিয়ে বলতে পারেন। তবে অযৌক্তিক কোনো কথাই বলা যাবে না। যেমন বাড়ির রং যদি হয় পিংক কালার তবে আপনি নিশ্চয় বাড়ির যেকোনো একটা ফ্লোরের অর্থ্যাৎ আপনি থাকা বাসাটির রং হিসেবে সবুজকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলতে পারেন না! অর্থ্যাৎ যে ডিজাইনই করার চেষ্টা করুন না কেনো, অন্ততপক্ষে রুচিশীলতাকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

এতে করে বাড়িওয়ালা সামান্য অনুরোধেই রাজি হয়ে যেতে পারেন। কেননা বাড়িওয়ালাও কিন্তু রুচিশীলতাকে প্রাধান্য দেওয়া ব্যাক্তির উল্টো ভার্সন নন। তবে হ্যাঁ! যতক্ষণ পর্যন্ত অনুমতি পাচ্ছেন না ততক্ষণ পর্যন্ত বাসার কোনো চেইঞ্জ কিংবা নতুন ডিজাইনে সাজানোর কথা মাথায় আনা যাবে না।

লাইটিং

যেকোনো বাসা এমনকি পুরো রুমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হয় লাইটিংকে। কেননা এটি প্রতিটি মানুষের ফিলিংসের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। অর্থ্যাৎ লাইটের উপর আপনার মন-মানসিকতা অনেকটাই নির্ভর করতে পারে। ডার্ক লাইটিং সিস্টেম যেমন আপনাকে ধীরে ধীরে কর্মহীন মানসিকতার দিকে ঠেলে দিতে পারে! তেমনই উজ্জ্বল লাইটিং সিস্টেম আপনাকে একটি কর্মক্ষম পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।

লাইটিং এর সাথে আবার বাসার আসবাবপত্র বিশেষ করে ফার্নিচার সেটাপের একটি ব্যাপার থাকে। সুতরাং আপনি যদি ওয়ার্ম টোনের কোনো ফার্নিচার ব্যবহার করতে চান তবে চেষ্টা করুন লাইটিং সিস্টেমকে হালকা ডার্ক করতে। আবার আপনি যদি ডার্ক থিমের ফার্নিচারকে প্রাধান্য দিতে চান তবে চেষ্টা করুন ওয়ার্ম লাইটিংকে প্রাধান্য দিতে। এতে করে রুম বা বাসার রুচিশীলতা বাড়বে কয়েকগুণ।

লাইটিং ক্যাটাগরিতে কিন্তু বিভিন্ন টেবিল ল্যাম্পও পড়ে। সুতরাং বাসা সাজানোর আইডিয়া হিসেবে আমি বলবো রুমের কালার এবং ফার্নিচার টোনের সাথে মিল রেখে টেবিল ল্যাম্প সিলেক্ট করে নিতে। কেবল টেবিল ল্যাম্পই নয়! আজকাল বিভিন্ন ধরণের ডিজাইন করা ল্যাম্প পাওয়া যায়।

যা বাসার সৌন্দর্যে বাড়াতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে। সুতরাং বাসার টোন, আপনার রুচিশীলতা, কমনসেন্স এবং কালারসেন্সের সমন্বয়ে পার্ফেক্ট ল্যাম্প সিলেক্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু।

বাসার ফ্লোর

একটি বাসার সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে রুমের দেওয়াল এবং ফ্লোরের উপর। হোক সেটা ড্রয়িং রুম কিংবা অন্য যেকোনো রুম। সুতরাং বাসার ফ্লোরের দিকে দিতে হবে বাড়তি মনোযোগ। চেষ্টা করতে ইউনিক এবং সেই সাথে রুচিশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে একটি স্যুট করা থিম ব্যবহার করার।

যাদের ডার্ক থিম পছন্দ তারা চাইলে ফ্লোর সাজাতে ডার্ক থিমের সাহায্য নিতে পারেন। আবার যাদের হোয়াইট থিম পছন্দ কিংবা উজ্জল কালারকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নেন, তারা ফ্লোরকে সাজাতে পারেন হোয়াইট থিমে। এক্ষেত্রে বাসার দেওয়ালের রংকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। আজকাল দেওয়ালের ক্ষেত্রে নিচের দিকে পারের মতো একটি আলাদা শেডের কালার দেওয়া থাকে। যা আপনি চাইলে ফ্লোর সাজানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন।

এবার আসি কার্পেটের ব্যাপারে। কার্পেট কিনতে গিয়ে সৌন্দর্যের আগে অবশ্যই এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জেনে নিবেন। বিশেষ করে ক্লিনিং সিস্টেম। পরিষ্কার করতে কষ্ট হয় এমন কার্পেট না নেওয়াই ভালো। আর হ্যাঁ, আজকাল ফ্লোরে শীতল পাটির ডিজাইন করা ইউনিক কার্পেট কিন্তু বেশ চলছে। চাইলে আপনিও ব্যবহার করতে করতে পারেন।

পর্দায় বৈচিত্র্য

বাসায় পর্দাকে গুরুত্ব না দিলে বা যেনো তেনো পর্দা ব্যবহার করলে তা দেখতে বেশ দৃষ্টিকটু মনে হয়৷ পর্দার ক্ষেত্রে আজকাল এক রঙের কাপড়ের ব্যবহার বেশ কমে এসেছে। বিভিন্ন ডিজাইন করা পর্দার চল চলছে এখন।

আধুনিক সময়ের পর্দার ডিজাইন হিসেবে এক্সট্রা ড্রেপ, এক্সট্রা কারটেইন হোল্ডারের সাহায্য নিচ্ছে অনেকেই। আপনি যদি সরাসরি কোনো শপ থেকে এসব ডিজাইন করা পর্দা কিনতে পারেন তাহলে তো ভালোই! তবে আপনি যদি বাড়তি বাজেটকে গুরুত্ব দিতে না চান বা পরিস্থিতি এমন হয় যে বাজেটের অভাবে পর্দার ডিজাইন নিয়ে মাথা ঘামাতে পারছেন না সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে নিজেই এসব ডিজাইন করতে পারেন৷

মেয়েরা সাধারণত হাতের কাজের প্রতি কিছুটা হলেও দক্ষ হয়ে থাকে। সেই সাথে ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিও টিউটোরিয়াল তো আছেই! তাছাড়া কালার টোন সম্পর্কে নিজের আইডিয়া এবং রুচিশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজের বাসার পর্দা সাজিয়ে নিতে পারেন।

দেওয়াল সাজাতে স্টিক অন ওয়ালপেপার

অনেকেরই ভাড়া নেওয়া বাসার দেওয়ালের রং পছন্দ হয় না। কিংবা অনেক বাসার দেওয়ালের অবস্থা যথেষ্ট করুণ হয়ে থাকে। দেওয়ালের বিভিন্ন দাগ কিংবা উঠে যাওয়া রং বরাবরই বিশ্রী লাগে। এমন পরিস্থিতিতে নয়তো নতুন করে দেওয়ালে রং লাগানো সম্ভব হয় না। বাড়িওয়ালার নিষেধাজ্ঞা কিংবা বাজেটের খপ্পরে পড়ে সেই পুরোনো রংচটা দেওয়াল নিয়েই পড়ে থাকতে হয়। তবে খানিকটা বুদ্ধি খাটালেই এমন পরিস্থিতিতে আর পড়তে হবে না।

বলছিলাম দেওয়াল সাজাতে স্টিক অন ওয়ালপেপার ব্যবহারের কথা। কম খরচে পারফেক্ট সমাধান হতে পারে এটি। আজকাল দেওয়ালে সহজে লাগানো যায় এমন অনেক স্টিক অন ওয়ালপেপার বের হয়েছে। পছন্দ মতো ডিজাইন সিলেক্ট করে নিজে কিংবা কোনো অভিজ্ঞ ব্যাক্তি দ্বারা দেওয়ালে লাগিয়ে নিন।

ঝুলন্ত সেলফ এর ব্যবহার

যারা ছোট বাসায় উঠেছেন তারা ঝুলন্ত সেলফ ব্যবহার করতে পারেন। এই জিনিস কিন্তু সবার আগে আপনার ঘরের জায়গা বাঁচাতে সাহায্য করবে। কেননা ছোট বাসার সবচেয়ে বড় সংকট থাকে জায়গা নিয়ে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে অনেক সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রুমে রাখাটাই হয়ে উঠে সবচেয়ে কঠিন মিশন।

সুতরাং সব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারর ঝুলন্ত শেলফ৷ এতে করে ছোটখাটো থেকে শুরু করে মাঝারি টাইপের সকল জিনিসপত্রই রাখা হয়ে যাবে ছোট্ট বাসাটিতে। আজকাল বিভিন্ন সেলফের শপে গেলেই সহজেই টেবিল বা কাউন্টার টপের অভাব দূর করে এমন সেলফের সন্ধান পেয়ে যাবেন। সুতরাং আর দেরি না আজই করে ফেলুন এই মস্ত সমস্যার সহজ সমাধান।

সফট ফারনিশিং

পুরো ঘর বা বাসা সাজালেন। অথচ সফট ফারনিশিং নিয়ে মোটেও মাথা ঘামালেন না। তা কি হয়? অবশ্যই না! বেডশিট, টেবিল কভার, সোফা কভার, বিভিন্ন ছোটখাটো জিনিসপত্র সবকিছু রুচিসম্মত হওয়া চাই।

বিশেষ করে সাজানো প্লাস কালার কম্বিনেশনের ব্যাপারটা মাথায় রাখা জরুরি। মনে রাখবেন, এই সফট ফারনিশিং সঠিকভাবে করা গেলে বাসার প্রতিটি রুম দেখতে অনন্য মনে হবে। পাশাপাশি এ কাজে বাড়িওয়ালারা খুব একটা দ্বিমতও পোষণ করেন না। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন ডিজাইন চেক করে আইডিয়া নিতে পারেন।

ইতি কথা

বাসা সাজানোর আইডিয়া হিসেবে একটি সম্পূর্ণ গাইডলাইন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই লেখাটি আপনার বাসা সাজাতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে৷ এই লেখা থেকে আপনি কিছুটা উপকৃত হলেই আমাদের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম সার্থক।

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments