ব্যস্ত শহুরে জীবনে ফ্ল্যাট বাসায় বসবাস করা মানেই এক ধরনের সীমিত স্থানে অনেক কিছুকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ। ছোট পরিসরে অনেক জিনিসপত্র, ধুলাবালি, আর প্রতিদিনের জীবনযাত্রার কারণে ঢাকার শহরের মতো ফ্ল্যাট দ্রুত নোংরা হয়ে যায়। তাই, ফ্ল্যাট পরিচ্ছন্ন রাখার টিপস জানা থাকা জরুরি।
একটি পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত ফ্ল্যাট শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এটি আমাদের মানসিক প্রশান্তিও বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দর ও পরিপাটি পরিবেশে বসবাসকারীদের মধ্যে স্ট্রেস কম থাকে এবং তাদের প্রোডাক্টিভিটি বেশি হয়।
এছাড়াও, নিয়মিত ফ্ল্যাট পরিষ্কার রাখা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধুলাবালি ও ময়লা বিভিন্ন জীবাণুর উৎস, যা শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। ফ্ল্যাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে আমরা এই ঝুঁকি কমাতে পারি এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারি।
তাই, আজ আমরা জানবো কীভাবে সহজ কিছু টিপস অনুসরণ করে ফ্ল্যাট সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখা যায়।
Contents
আপনার ফ্ল্যাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার রুটিন থাকা জরুরি। অনেকেই সপ্তাহের শেষের দিকে কাজের ছুটি থাকায়, বড় ধরনের পরিষ্কার কাজ করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এটা সবসময় সম্ভব হয় না।
তাই দৈনিক ও সাপ্তাহিকভাবে কিছু নির্দিষ্ট কাজ ভাগ করে নিলে বাসার পরিচ্ছন্নতা সহজেই বজায় রাখা যায়। নিচে দৈনিক ও সাপ্তাহিক কাজের একটা আইডিয়া দেওয়া হলো।
প্রতিদিনের কিছু ছোট ছোট কাজ আমাদের বাসাকে সবসময় ঝকঝকে ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে। যেমন ধরুন, নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার জানালা খুলে দিলে ভেতরে তাজা বাতাস ঢুকতে পারে। এটা যে শুধু বাসাকে সতেজ রাখে তা নয়, বরং বাসার ভেতরের বাতাসের গুণগত মানও ভালো রাখে।
আবার রান্নার সময় যে তৈলাক্ত পদার্থ দেয়ালে লাগতে পারে, তা একবার মুছে নিলে পরে কষ্ট করে ঘষতে হবে না। এছাড়াও প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে যদি আপনি রান্নাঘরের সিঙ্ক পরিষ্কার করে রাখেন, তাহলে সকালে উঠে দেখবেন আপনার কাজ অনেক কমে গেছে।
প্রতিদিনের কাজগুলো ছোট মনে হলেও, এগুলো আপনার ফ্ল্যাট বাসাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রতিদিনের কাজগুলো যদি নিয়মিত করা হয়, তবে সাপ্তাহিক পরিষ্কারের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।
সপ্তাহে অন্তত একদিন পুরো ফ্ল্যাটকে ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত। সাপ্তাহিক পরিষ্কার কাজের জন্য আপনি একটি চেকলিস্ট তৈরি করে নিতে পারেন। এই চেকলিস্টে কোন দিন কোন কাজ করতে হবে তা উল্লেখ থাকলে, কাজগুলো মনে রাখা সহজ হবে এবং কোনো কাজ বাদ পড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।
লিভিং রুম একটা ফ্ল্যাটের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে পরিবারের সদস্যদের একসাথে সময় কাটান। লিভিং রুমের সোফা, কুশন এবং কার্পেট প্রতি সপ্তাহে ভ্যাকুয়াম করা উচিত, যাতে ধুলাবালি জমতে না পারে। এছাড়া জানালা এবং আয়না পরিষ্কার থাকলে, লিভিং রুমে আলো ভালোভাবে প্রবেশ করে এবং এটা দেখতেও সুন্দর লাগে।
এছাড়া প্রতি এক সপ্তাহে অন্তত একবার পুরো ফ্ল্যাট, কিচেন ও বাথরুমের টাইলস ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।
বাসার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো দৈনিক বা সাপ্তাহিকভাবে পরিষ্কার করতে পারেন। কাঠের আসবাবপত্র নরম কাপড় দিয়ে মোছার চেষ্টা করুন, এতে এগুলো দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো পরিষ্কার করার জন্য মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। কারণ মাইক্রোফাইবার স্ক্র্যাচ প্রতিরোধ করতে পারে।
অনেক সময় আমরা ছোটখাটো সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাই বা পরে ঠিক করবো বলে ফেলে রাখি। কিন্তু এগুলো খুব দ্রুতই বড় সমস্যায় রূপ নিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ছোট পানির লিকেজ যদি দ্রুত মেরামত করা না হয়, তাহলে এটা দেয়াল এবং মেঝেতে ড্যাম্প তৈরি করতে পারে। যা পরবর্তীতে মেরামত করতে বেশি টাকা গুনতে হবে!
ফ্ল্যাটের বিভিন্ন অংশের মেরামতের কাজ যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা উচিত। যদি রান্নাঘর বা বাথরুমের কোথাও লিকেজ থাকে, তাহলে সেটা যত দ্রুত সম্ভব মেরামত করুন। অনেকেই লিকেজ সমস্যাকে সামান্য মনে করেন, কিন্তু এটি ভবিষ্যতে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।
ইলেকট্রিক্যাল ইস্যুগুলোকেও অবহেলা করা উচিত না। বাসার কোনো সুইচ বা সকেট নষ্ট হলে দ্রুত একজন ইলেকট্রিশিয়ানের সাহায্য নিন। এছাড়া কাঠের আসবাবপত্রে ঘুন ধরলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাঠমিস্ত্রির সাহায্য নিতে পারেন।
আপনার ফ্ল্যাট যদি কোনো অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে থাকেন, তাহলে বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট অথবা কেয়ারটেকারের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারেন, যাতে সমস্যার একটি রেকর্ড থাকে।
ঋতুর বদলের সাথে সাথে অ্যাপার্টমেন্টের পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তা ও ধরণও বদলে যায়। মৌসুমি পরিচর্যার জন্য আলাদা প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
১. গ্রীষ্মকালীন যত্নঃ গ্রীষ্মকালে ধুলাবালির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই জানালার কাঁচ এবং ফ্যান নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এছাড়া এসির ফিল্টার প্রতি দুই সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করুন।
২. শীতকালীন যত্নঃ শীতকালে হিটিং সিস্টেম নিয়মিত চেক করুন এবং প্রয়োজন হলে মেরামত করুন। দরজা-জানালার ফাঁক বন্ধ রাখুন, যাতে ঠান্ডা বাতাস বাসার ভেতরে ঢুকতে না পারে। শীতকালীন পোশাক ও লেপ-কম্বল ব্যবহারের আগে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন, এতে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ চলে যাবে।
৩. বর্ষাকালীন যত্নঃ এই সিজনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল স্যাঁতসেঁতে ভাব ও ফাঙ্গাস। বর্ষাকালে ছাদ এবং বেলকনি পরিষ্কার রাখুন, যাতে জল জমে না থাকে। এছাড়া দেয়ালের ড্যাম্প প্রতিরোধ করার জন্য ভালো মানের পেইন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার সাধের ফ্ল্যাটটি পরিচ্ছন্ন রাখতে এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনি একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে পারবেন। মনে রাখবেন, এক ধাপে বড় কোনো কাজ করার চেয়ে নিয়মিত ছোট ছোট কাজ করা অনেক সহজ। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট সময় দিলেই আপনার ফ্ল্যাট সবসময় ঝকঝকে থাকবে।
তাই, এই ব্লগে আলোচিত ফ্ল্যাট পরিচ্ছন্ন রাখার টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনার ফ্ল্যাটকে স্বপ্নের নীড়ে পরিণত করুন। ব্লগটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!