ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্তটা জীবনের একটা বড় পদক্ষেপ। বিশেষ করে প্রথমবার যখন ফ্ল্যাট কিনছেন, তখন নানা প্রশ্ন মাথায় আসে কোন ধরনের ফ্ল্যাট নেওয়া উচিত? রেডি না নির্মাণাধীন? দাম, সময়, ঝুঁকি, আর ভবিষ্যত লাভ কেমন হবে? এসব ভাবনা স্বাভাবিক। তাই আগে ভালোভাবে জানাটা জরুরি।
ফ্ল্যাট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। তাড়াহুড়ো বা ভুল সিদ্ধান্তে পরে ঝামেলা বাড়তে পারে। চলুন, সহজ ভাষায় রেডি ফ্ল্যাট ও নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের পার্থক্য, সুবিধা-অসুবিধা ও কেনার আগে করণীয়গুলো দেখে নেই।
Contents
রেডি ফ্ল্যাট মানে সেই ফ্ল্যাট যা পুরো নির্মাণ শেষ। আপনি চাইলে আজই গিয়ে দেখে, কালই দখল নিতে পারবেন। কোনো ওয়েটিং লিস্ট নেই, কোনো “কবে হস্তান্তর হবে” টাইপ দুশ্চিন্তা নেই। অনেকটা এমন যে ব্যাগ গুছালেন আর সরাসরি নতুন বাসায় উঠলেন।
রেডি ফ্ল্যাটের বড় সুবিধা হলো যা দেখেন, তাই পান। ফ্ল্যাটের ফিনিশিং, রুমের সাইজ, আলো–বাতাস, লিফট, সিকিউরিটিসহ সব কিছু বাস্তবে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তাই যারা ঝুঁকি নিতে চান না বা তাড়াতাড়ি থাকার জায়গা দরকার তাদের প্রথম পছন্দই হয় রেডি ফ্ল্যাট।
নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট মানে এমন ফ্ল্যাট যা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। অনেক সময় ফাউন্ডেশন তৈরি, কিছু ফ্লোর বানানো বা শুধু নকশা–অনুমোদন শেষ—এমন অবস্থায়ই বিক্রি শুরু হয়। ক্রেতা আগে বুকিং দেন, আর সব কাজ শেষ হলে হাতে পান চাবি। সহজভাবে বললে, এটা অনেকটা “আজ বুকিং, ভবিষ্যতে পাওয়ার” সিস্টেম।
এই ধরনের ফ্ল্যাট সাধারণত তাদের জন্য যারা কম বাজেটে ভালো লোকেশনে একটি ফ্ল্যাট চান বা ভবিষ্যতের জন্য স্মার্ট বিনিয়োগ খুঁজছেন।
প্রথমবার ফ্ল্যাট কিনতে গেলে মাথায় অনেক প্রশ্ন আসে দাম কেমন হবে, কখন উঠতে পারব, ঝুঁকি আছে কি না, ভবিষ্যতে লাভ হবে কি না। এসব ভাবার সময় সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা হলো রেডি ফ্ল্যাট নেবেন নাকি নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট? চলুন সহজ ভাষায় দুটোর পার্থক্য দেখে নেই।
|
তুলনার বিষয় |
রেডি ফ্ল্যাট |
নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট |
| মূল্য | দাম একটু বেশি কারণ সব কাজ সম্পূর্ণ এবং গুণগত মান নিশ্চিত। | দাম কম হয়, কারণ নির্মাণের আগে কিনতে হয়। প্রি-লঞ্চ অফারও পাওয়া যায়। |
| ফ্ল্যাটে ওঠার সময় | আজ কিনলেই খুব দ্রুত (সামান্য সময়ের মধ্যে) ফ্ল্যাটে উঠা যায়। | নির্মাণ শেষ হওয়ার পরে উঠতে হয়। সময় নির্দিষ্ট নয়, বিলম্ব হতে পারে। |
| পেমেন্ট ব্যবস্থা | সম্পূর্ণ টাকা একবারে দিতে হয় বা লোন নিয়ে দিতে হয়। | কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ থাকে, বাজেট সীমিতদের জন্য সুবিধাজনক। |
| ঝুঁকি | খুব কম ঝুঁকি, কারণ সবকিছু সরাসরি দেখে যাচাই করা যায়। | ঝুঁকি বেশি, যেমন নির্মাণ বিলম্ব, মান কম হতে পারে, ডেভেলপারের ওপর নির্ভরতা। |
| কাস্টমাইজেশন | ফ্ল্যাটের কাঠামো ও ডিজাইন পরিবর্তনের সুযোগ খুব সীমিত বা নেই। | নির্মাণ চলাকালে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন, ফিনিশিং বা লেআউট পরিবর্তন করা যায়। |
| ভাড়া আয়ের সুযোগ | ফ্ল্যাট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া দিয়ে আয়ের সুযোগ শুরু করা যায়। | নির্মাণ শেষ না হলে ভাড়া দেওয়া যায় না, তাই অপেক্ষা করতে হয়। |
| মান যাচাইয়ের সুযোগ | সরাসরি ফ্ল্যাট দেখে টাইলস, প্লাম্বিং, বৈদ্যুতিক কাজ ইত্যাদি দেখে মান নিশ্চিত করা যায়। | কেবল নকশা ও মকআপ দেখে অনুমান করতে হয়, বাস্তব মানের নিশ্চয়তা নেই। |
প্রথমবার ফ্ল্যাট কিনছেন? তাহলে নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা আর মান এই তিনটি দিক ভাবলে রেডি ফ্ল্যাটই সবচেয়ে সহজ এবং ঝামেলামুক্ত সিদ্ধান্ত। তবে সময় ও ধৈর্য থাকলে, নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটেও ভবিষ্যতে ভালো লাভ পাওয়া যায়, শুধু ডেভেলপারটা বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
ফ্ল্যাট কেনার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করা খুব জরুরি। ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম কানুনগুলো মেনে ফ্ল্যাট কিনলে আপনার টাকা ও সময় বাঁচবে, আর ভবিষ্যতে ঝামেলাও কম হবে। নিচে ফ্ল্যাট কেনার সময় যা যা অবশ্যই দেখতে হবে তা দেওয়া হলো:
নির্মাণ ও মান যাচাই: ফ্ল্যাটের বাস্তব অবস্থা নকশার সঙ্গে মিল রাখে কিনা দেখুন। ব্যবহৃত সামগ্রীর গুণগত মান, আলো বাতাস, নিরাপত্তা, আশপাশের পরিবেশ খতিয়ে দেখুন।